ক্ষমতাসীন জান্তা প্রশাসনের সঙ্গে জান্তাবিরোধী রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (নাগ) সংঘাতে ভৌগলিকভাবে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে মিয়ানমার। দেশটির রাষ্ট্রপতি মিন্ত সোয়ে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানী নেইপিদোতে দেশটিতে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি। সেখানে তিনি বলেন, ‘সীমান্ত অঞ্চলে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে, সরকার যদি তা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারে— সেক্ষেত্রে এই সংঘাতের জেরে সামনে মিয়ানমার টুকরো টুকরো হয়ে যাবে এবং বেশ কিছু অঞ্চল স্বাধীনতা ঘোষণা করবে।’

জান্তার সঙ্গে লড়াইয়ের প্রথমদিকে চাপে থাকলেও বর্তমানে তা কাটিয়ে ওঠার আভাস দিচ্ছে নাগ। সম্প্রতি চীনের সঙ্গে সীমান্তবর্তী বেশ কিছু শহর দখল করে নিয়েছে নাগের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী। সর্বশেষ মঙ্গলবার দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ সাগাইংয়ের কাওলিন জেলা শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন নাগের যোদ্ধারা।

কাওলিন কৌশলগত দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। কারণ কাওলিন জেলার সামরিক প্রশাসনিক কার্যালয়ের সদর দপ্তরের অবস্থান এই শহরে। প্রায় ২৫ হাজার মানুষ বসবাস করেন কাওলিনে।

যেহেতু জেলার সামরিক প্রশানিক কার্যালয়ের শহর কাওলিনে, তাই এই শহরটির দখল করা মানে এক অর্থে পুরো কাওলিন জেলার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।

এই পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের সাধারণ জনগন যেন সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করে, সেজন্য পদক্ষেপ নিতে জান্তাকে পরামর্শও দিয়েছেন মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারকে অখণ্ড রাখতে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন জরুরি। এ কারণে সরকারের উচিত হবে সতর্কতার সঙ্গে এই ইস্যুটি নিয়ন্ত্রণ করা।’

২০২০ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় পেয়ে সরকার গঠন করেছিল মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। কিন্তু সেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। দেশটির তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং সেই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

ক্ষমতা দখলের পর বন্দি করা হয় এনএলডির শীর্ষ নেত্রী অং সান সু চিসহ দলটির অধিকাংশ উচ্চ ও ও মাঝারি পর্যায়ের নেতা ও আইনপ্রণেতাদের। এখনও তারা কারাগারে রয়েছেন।

মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী জনগণ অবশ্য সামরিক বাহিনীর এ পদক্ষেপ একেবারেই মেনে নেয়নি। বাহিনী ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই রাজধানী নেইপিদো, প্রধান শহর ও বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনসহ দেশটির ছোট-বড় বিভিন্ন শহরে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের শুরুর দিকে শান্তিপূর্ণভাবে তা দমনের চেষ্টা করলেও একসময় বিক্ষোভ দমন করতে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয় জান্তা।

নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে হাজারেরও অধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এক পর্যায়ে গণতন্ত্রপন্থীরা জান্তাবিরোধী রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোতে যোগ দিতে থাকেন, গঠিত হয় ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট বা নাগ।

জান্তাবিরোধী এই রাজনৈতিক জোট নিজেদেরকে দেশটির ছায়া সরকার বলেও দাবি করে।

সূত্র : রয়টার্স

এসএমডব্লিউ