ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভায় পাহাড়ে ঘেরা অঞ্চল। চারদিক সবুজে ভরা। এর মধ্যে এদিক-ওদিক পড়ে আছে অসংখ্য রহস্যময় পাথর। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এটি পবিত্র স্থান। কিন্তু এর আসল মাহাত্ম্য এতদিন কেউই জানতেন না।

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, মাটির নিচে লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে এক বিশাল পিরামিড। মিশরের পিরামিডের চেয়েও পুরোনো। স্টোনহেঞ্জের চেয়েও পুরোনো। সম্ভবত মানুষের তৈরি সবচেয়ে প্রাচীন মেগালিথিক (একাধিক বিশালাকারের পাথর দিয়ে তৈরি) স্থাপত্য। এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি ‘আর্কিওলজিক্যাল প্রসপেকশন’-এ প্রকাশিত হয়েছে।

নাম ‘গুনুং পাডাং’। স্থানীয় বাসিন্দারা এ ধরনের স্থাপত্যকে বলেন ‘পান্ডেন বেরুনডাক’। অর্থাৎ ধাপে ধাপে ওঠা পিরামিড। এ অঞ্চলে প্রত্নতত্ত্ববিদদের পা পড়েছে বছর দশেক আগে। জায়গাটি এক মৃত আগ্নেয়গিরি। এর উর্বর লাভা মাটিতে প্রাণের সঞ্চার ঘটিয়েছে। পাহাড়ের গায়ে সবুজ মোরামের নিচে যে চাপা পড়ে আছে সুপ্রাচীন স্থাপত্য, তা কেউ টেরই পাননি। প্রত্নতত্ত্ববিদরা জানিয়েছেন, মানুষের বুদ্ধি, প্রতিভা ও উৎকর্ষের প্রমাণ বহন করছে এই পিরামিড।

যিশু খ্রিষ্টের জন্মেরও হাজার হাজার বছর আগে ওই মৃত আগ্নেয়গিরির মাথায় পিরামিড তৈরি করা হয়েছিল। এর ভেতরে রয়েছে বৃহদাকার গুপ্ত কক্ষ। তবে তাতে কী রয়েছে, এখনো তা অজানা। স্থানীয় ভাষায় গুনুং পাডাং-এর অর্থ ‘জ্ঞানের পাহাড়’। প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের পর বিশেষজ্ঞদের দাবি, কোনো এক প্রাচীন মানবসভ্যতা আগ্নেয় পাথরের তৈরি পাহাড়ের গা কেটে এই স্থাপত্য তৈরি করেছিল। রেডিয়োকার্বন ডেটিংয়ের রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, শেষ তুষার যুগে তৈরি হয়েছিল এই স্থাপত্য, যিশু খ্রিষ্টের জন্মের আনুমানিক ১৬ হাজার থেকে ২৭ হাজার বছর আগে। এখন পর্যন্ত মানুষের জানা সবচেয়ে পুরোনো মেগালিথিক স্থাপত্য ‘গোবেকলি টেপে’ (বর্তমানে যা তুরস্কে)। সেটি তৈরি হয়েছিল ১১ হাজার বছর আগে।

দীর্ঘ গবেষণা ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের পর রিপোর্টটি প্রকাশ করেছেন ইন্দোনেশিয়ার ‘ন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন এজেন্সি’র বিশেষজ্ঞেরা। ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রত্নতত্ত্ববিদ, ভূতত্ত্ববিদ, ভূপদার্থবিদদের একটি বিশেষ দল অভিযান চালিয়ে যান। তার পর চলে বিশ্লেষণ। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন ভূতত্ত্ববিদ ড্যানি হিলম্যান নাটাউইদজাজা।

ড্যানি জানান, গুনুং পাডাংয়ের গঠন বেশ জটিল কিন্তু একইসঙ্গে অভিজাত। এর সবচেয়ে গভীর অংশ মাটি থেকে ৩০ মিটার নিচে। তার দাবি, পিরামিডের কেন্দ্রস্থলটি খ্রিষ্টপূর্ব ২৫ হাজার থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১৪ হাজার বছরের মধ্যে তৈরি। কিন্তু তারপর দীর্ঘদিন সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। আবার খ্রিষ্টপূর্ব ৭৯০০ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৬১০০ বছরের মধ্যে এর কাজ চলে। চূড়ান্ত কর্মকাণ্ডটি চলে খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১১০০ বছরের মধ্যে। পিরামিডের উপরিভাগের অংশটিই বর্তমানে কিছুটা দৃশ্যমান।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, স্থাপত্যটি বৈচিত্র্যে ভরা। গবেষণাপত্রে লেখা হয়েছে, গুনুং পাডাং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর দখলে এসেছে এবং তাদের প্রভাবে এর আকারে পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে এর ছত্রে ছত্রে লুকিয়ে রয়েছে ইতিহাস।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গবেষণার আরও বাকি রয়েছে। পাহাড়ের মাথায় বিভিন্ন জায়গায় গোপন গহ্বর দেখতে পেয়েছেন তারা। রয়েছে বহু গুপ্ত কক্ষ। তার এক-একটি ১৫ মিটার দীর্ঘ। সে সব ঘরের মেঝে থেকে ছাদের উচ্চতা প্রায় ১০ মিটার। বিশেষজ্ঞেরা এখন মাটি খুঁড়ে ওই সব ঘরে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। ঘরে ঢোকা না গেলে মাটির নিচের ওই সব কক্ষে ক্যামেরা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। ড্যানি বলেন, গুনুং পাডাং আরও রহস্য উন্মোচন করবে শিগগিরই।

এসএসএইচ