হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধের মাঝে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাথে আন্তঃসীমান্ত সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে ইরান-সমর্থিত লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর হুঁশিয়ারির পর শনিবার ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। তবে এতে উভয়পক্ষের কোনও হতাহত হয়েছে কি না তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি।

শনিবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘লেবানন থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডের দিকে একাধিক হামলা করেছে হিজবুল্লাহ। এই হামলার জবাবে হিজবুল্লাহর স্থাপনা ও পর্যবেক্ষণ চৌকিতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।’’

এদিকে, একই দিনে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত লাগোয়া ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর ছয়টি অবস্থানে হামলা চালানোর দাবি করেছে হিজবুল্লাহ।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকায় মোতায়েন করা সৈন্যদের সাথে শনিবার সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় তিনি লেবাননের সাথে যুদ্ধে ইসরায়েলের জড়িয়ে পড়ার কোনও আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা প্রত্যেকটি মিশনের জন্য প্রস্তুত।’’

গ্যালান্ত বলেছেন, ‘‘হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ যদি কোনও ভুল করেন, তাহলে ইসরায়েলি বাহিনী লেবাননের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে।’’

টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে শনিবার ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকায় বেশ কয়েকটি হামলার খবর দেওয়া হয়েছে। লেবাননের দক্ষিণ সীমান্ত থেকে ইসরায়েলে এসব হামলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লেবানন সীমান্তের কাছাকাছি ইসরায়েলের দিশোন এবং মালকিয়ার গ্যালিলির একাধিক এলাকায় রকেটের সাইরেন বাজিয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

হিজবুল্লাহ এবং ফিলিস্তিনের অন্যান্য মিত্রদের দক্ষিণ লেবানন থেকে উত্তর ইসরায়েলে তীব্র রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাঝে বাসিন্দাদের সতর্ক করছে কর্তৃপক্ষ। দিশোন ও মালকিয়ার গ্যালিলির ছাড়াও শনিবার উত্তর ইসরায়েলের রোশ হানিকরা এলাকায় কয়েকটি রকেট ছুড়েছে হিজবুল্লাহ। তবে এই শহরে বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিতে সাইরেন বাজানো হয়নি।

রকেট হামলায় রোশ হানকিরায় কেউ আহত হননি বলে জানিয়েছে আইডিএফ। সৈন্যরা লেবাননের ভূখণ্ডে রকেটের উৎস লক্ষ্য করে গোলাবারুদ নিক্ষেপ করছেন। হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর দিন অর্থাৎ গত ৮ অক্টোবর থেকে এই যুদ্ধে হিজবুল্লাহ জড়িয়েছে বলে শুক্রবার দেওয়া এক ভাষণে জানিয়েছেন গোষ্ঠীটির প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ।

তখন থেকে প্রায় প্রত্যেক দিনই ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাশাপাশি সীমান্তে ইসরোয়েলি সৈন্যদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন হিজবুল্লাহর সদস্যরা। চার সপ্তাহ আগে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর শুক্রবার প্রথমবারের মতো দেওয়া ভাষণে নাসরুল্লাহ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গাজা যুদ্ধের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দায়ী। আর চলমান এই সংঘাতের সম্প্রসারণের শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ইসরায়েলের সাথে সংঘাতে হিজবুল্লাহর এখন পর্যন্ত ৫৭ সদস্য নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন হাসান নাসরুল্লাহ। গত প্রায় এক মাসের যুদ্ধে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৯ হাজার ৬১ জনে। নিহতদের অধিকাংশই শিশু-নারী ও বেসামরিক লোকজন। আর হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন।

এসএস