ইসরায়েলি সেনাদের ব্যাগে করে ফেরত পাঠানোর হুমকি হামাসের
টানা প্রায় এক মাস ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এমনকি গাজার ভেতরে ঢুকে ভূখণ্ডটির প্রধান শহরকে ঘিরে ফেলার দাবিও করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই পরিস্থিতিতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।
তারা ইসরায়েলি সেনাদের ব্যাগে করে ফেরত পাঠানোর হুমকি দিয়েছে। শুক্রবার (৩ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বিজ্ঞাপন
গাজা উপত্যকার উত্তরে অবস্থিত গাজা শহরটি বর্তমানে ইসরায়েলের আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েল সেখানে হামাসের কমান্ড কাঠামোকে ধ্বংস করার অঙ্গীকার করেছে এবং বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডের দক্ষিণ অংশে পালিয়ে যেতে বলেছে।
রয়টার্স বলছে, গাজায় প্রবল বিস্ফোরণের মধ্যে ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘হামাসের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু গাজা শহর ঘেরাও সম্পন্ন করেছে তাদের সৈন্যরা। বর্তমানে যুদ্ধবিরতির কোনও চিন্তা-ভাবনা নেই।’
অন্যদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। সেখানে মূলত সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে হামলা শেষে আবারও সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়ছেন হামাসের যোদ্ধারা। হামাসের এমন হামলায় ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে।
হামাসের সশস্ত্র শাখার মুখপাত্র আবু উবাইদা বৃহস্পতিবার টেলিভিশন দেওয়া এক ভাষণে বলেছেন, গাজায় নিহত ইসরায়েলি সেনাদের সংখ্যা সেনাবাহিনীর ঘোষণার চেয়েও অনেক বেশি। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আপনাদের সৈন্যদের কালো ব্যাগে করে ফেরত পাঠানো হবে।’
এর আগে গাজা উপত্যকাকে ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের ‘গোরস্তান’ বানানোর ঘোষণা দেয় হামাস। আবু উবাইদা গত মঙ্গলবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে বলেন, ‘গাজা উপত্যকাকে ইসরায়েলের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের গোরস্তান বানানোর আগ পর্যন্ত আমরা থামব না।’
ইসরায়েল বলেছে, গত শুক্রবার গাজায় স্থল অভিযান সম্প্রসারিত হওয়ার পর থেকে হামাসের হামলায় তারা ১৮ জন সৈন্য হারিয়েছে এবং বহু হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।
ইসরায়েলের সামরিক প্রকৌশলীদের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইদ্দো মিজরাহি বলেছেন, ইসরায়েলি সেনারা মাইন এবং বুবি ফাঁদের মুখোমুখি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘হামাস এসব বিষয়ে বেশ শিখেছে এবং নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করেছে।’
এদিকে হামাস এবং তাদের মিত্র ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধারা তাদের গোপন সুড়ঙ্গ থেকে বের হয়ে ইসরায়েলি সেনাদরে ওপর হামলা চালাচ্ছেন। হামলা চালিয়ে আবার সঙ্গে সঙ্গে সুড়ঙ্গের ভেতর চলে যাচ্ছেন তারা। গাজার কয়েকজন বাসিন্দার বক্তব্য এবং হামাস ও ইসরায়েলের প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে এমন দৃশ্য।
হামাসের একটি সামরিক ভিডিওতে একজন যোদ্ধাকে সুড়ঙ্গ থেকে বের হয়ে গাজার একটি মাঠে ট্যাংকে বিস্ফোরক ডিভাইস রাখতে দেখা যায়। পরে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং ওই যোদ্ধা টানেলে ফিরে আসার সময় ট্যাংকের দিকে অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে ৩ হাজার ৭৬০ জনই শিশু।
আরও পড়ুন
এছাড়া ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৩২ হাজার ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলের এই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার কোনও অবকাঠামো। তারা মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবিরসহ বেসামরিক মানুষের বাড়ি-ঘর সব জায়গায় হামলা চালিয়ে আসছে।
একইসঙ্গে গত ৮ অক্টোবর থেকে গাজায় সর্বাত্মক অবরোধও আরোপ করে রেখেছে ইসরায়েল। এতে করে ফিলিস্তিনি নাগরিকরা খাদ্য, জ্বালানি, খাবার পানি ও ওষুধের সংকটে পড়েছেন।
ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর মুখপাত্র জুলিয়েট তোমা বলেছেন, ‘পানিকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
টিএম