হামাসকে ইসরায়েল সফলভাবে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে পারলে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নতুন কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে দিতে পারে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি সেখানকার নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠনের কথাও ভাবছেন মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। আর বাহিনীর অংশ হিসেবে গাজায় মার্কিন সৈন্যদেরও মোতায়েন করা হতে পারে। বুধবার ইসরায়েলি ও মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলের স্থল হামলা সম্প্রসারিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ফিলিস্তিনি ছিটমহলের ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে সেই বিষয়ে বিকল্প খুঁজছেন। এই বিকল্পের মাঝে গাজায় বিভিন্ন স্তরের শান্তিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকরের পরিকল্পনাও রয়েছে বলে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ব্লুমবার্গকে জানিয়েছেন।

ব্লুমবার্গ বলছে, ‘‘একটি বিকল্প অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং ফ্রান্সের সৈন্যদের সহায়তায় ওই অঞ্চলের দেশগুলোকে গাজার তদারকির অস্থায়ী দায়িত্ব দেওয়া হবে। এতে সৌদি আরব বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো আরব দেশগুলোর প্রতিনিধিরাও অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।’’

গাজার ভবিষ্যৎ বিকল্পের এই আলোচনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মঙ্গলবার দেশটির আইনপ্রণেতাদের সাথে এক আলোচনায় এই বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। আর ওয়াশিংটন এই পরিকল্পনার সাথে গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট বলে জানিয়েছেন তিনি।

সিনেটের শুনানিতে তিনি বলেন, ‘‘আমরা হামাস পরিচালিত গাজার স্থিতাবস্থায় প্রত্যাবর্তন করতে পারি না। আবার ইসরায়েলিরাও এটি পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণ করতে চায় না, আমরাও চাই না।’’

‘‘এর মাঝেই আমরা বিভিন্ন ধরনের সম্ভাব্য বিকল্পের বিষয়ে আলোচনা করছি। এখনও আমরা সেখানকার পরিস্থিতি অন্যান্য দেশের মতো খুব কাছ থেকে দেখছি।’’

তবে মার্কিন এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজার বিকল্প সম্ভাবনাগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য জানাননি। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা ১৯৭৯ সালে ইসরায়েল এবং মিসরের স্বাক্ষরিত একটি শান্তি চুক্তির আদলে নতুন শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠন করতে চায়।

ইসরায়েল-মিসরের চুক্তি অনুযায়ী, বহুজাতিক বাহিনী ও পর্যবেক্ষক (এমএফও) সিনাই উপদ্বীপের এলাকাগুলো পর্যবেক্ষণ করে আসছে। ইসরায়েলি সরকার নতুন এই বিকল্প ব্যবস্থাপনাকে ‘বিবেচনার যোগ্য’ বলে মনে করে, বলেন ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা।
 
সম্ভাব্য তৃতীয় ব্যবস্থাপনার আওতায় জাতিসংঘকেও গাজার ‘অস্থায়ী দেখভালের’ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। যদিও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এই পরিকল্পনার ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নন। তারা সম্ভাব্য এই বিকল্পকে ‘অবাস্তব’ হিসেবে দেখছেন বলে জানিয়েছেন।

গত ৭ অক্টোবর গাজার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে উপত্যকায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী। তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান এই হামরায় ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৮ হাজার ৫২৫ জনে পৌঁছেছে। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের অর্ধেকেরও বেশি শিশু ও নারী।

চলমান এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৪২ শিশু ও ২ হাজার ১৮৭ নারী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ২১ হাজার ৫৪৩ ফিলিস্তিনি। আর হামাসের হামলায় ইসরায়েলিদের প্রাণহানির সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর ৩২৬ সৈন্য রয়েছে।

সূত্র: ব্লুমবার্গ, আরটি।

এসএস