ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। টানা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন সাড়ে আট হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। রক্তাক্ত এই আগ্রাসনের জেরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ক্ষোভ।

এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়া। একইসঙ্গে গাজা উপত্যকায় হামলা বন্ধের দাবিও জানিয়েছে দেশটি। বুধবার (১ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করেছে বলিভিয়ার সরকার। দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির প্রেসিডেন্সির মন্ত্রী মারিয়া নেলা প্রাদা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বহুজাতিক রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের সাথে বলিভিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’

তিনি বলেন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করার জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছে বলিভিয়া। একইসঙ্গে গাজা উপত্যকায় হামলা বন্ধের দাবিও করেছে দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটি। ইসরায়েলের এই হামলায় ইতোমধ্যে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষের মৃত্যু এবং লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।’

বলিভিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রেডি মামানি বলেছেন, ‘আগ্রাসী ও নির্বিচার ইসরায়েলি সামরিক আক্রমণকে প্রত্যাখ্যান ও নিন্দা করতে এবং (এই হামলা) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

আনাদোলু বলছে, ২০০৯ সালে গাজা উপত্যকায় হামলার প্রতিবাদে ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল বলিভিয়া। কিন্তু ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট জিনাইন আনেজের সরকারের সময় ইসরায়েলের সঙ্গে এই সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

এর আগে হামাসের সঙ্গে চলমান সংঘাতের মধ্যে গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা হুমকি দেয় দক্ষিণ আমেরিকার আরেক দেশ কলম্বিয়া। আর এই ঘটনায় কলম্বিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনার পারদ আরও বেড়ে যায়।

মূলত অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কয়েকটি পোস্ট করেছিলেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো। এর জেরে দক্ষিণ আমেরিকান এই দেশটির কাছে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসরায়েল।

এরপরই ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করার হুমকি দেন প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো।

সেসময় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো বলেন, ‘যদি ইসরায়েলের সঙ্গে আমাদের বৈদেশিক সম্পর্ক স্থগিত করতে হয় তবে আমরা তা স্থগিত করব। তারপরও আমরা গণহত্যা সমর্থন করি না। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টকে অপমান করা যাবে না।’

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ইতোমধ্যেই সাড়ে ৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

নিহতদের মধ্যে সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি শিশু, ২ হাজারের বেশি নারী এবং প্রায় পাঁচশো বয়স্ক মানুষ রয়েছেন। এছাড়া ইসরায়েলের এই বিমান হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার কোনও অবকাঠামো।

তারা মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবিরসহ বেসামরিক মানুষের বাড়ি-ঘর সব জায়গায় হামলা চালিয়ে আসছে। একইসঙ্গে গত ৮ অক্টোবর থেকে গাজায় সর্বাত্মক অবরোধও আরোপ করে রেখেছে ইসরায়েল।

টিএম