রাফাহ ক্রসিংয়ে অপেক্ষমাণ ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোকে যদি গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করতে না দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে তা ‘অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করা হবে বলে ইসরায়েলকে সতর্কবার্তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।

আইসিসিসির শীর্ষ প্রসিকিউটর করিম আসাদ আহমেদ খান (করিম খান) সোমবার রাফাহ ক্রসিং এলাকায় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে ওই এলাকা সরেজমিনে ঘুরেও দেখেন তিনি।

করিম খান বলেন, ‘আমি দেখলাম, ত্রাণ ও মানবিক সহায়তাবাহী ট্রাকগুলো এমন জায়গায় থেমে আছে, যেখানে কারোরই এসব সামগ্রীর কোনো প্রয়োজন নেই। এই ট্রাকগুলোকে অবশ্যই অবিলম্বে গাজায় প্রবেশ করতে দিতে হবে এবং সেজন্য পদক্ষেপ নিতে হবে ইসরায়েলকে। যদি এমন না ঘটে, সেক্ষেত্রে আইসিসি তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করবেন।’

প্রসঙ্গত, মিশরের সিনাই মরুভূমি থেকে গাজা উপত্যকাকে পৃথক করা সীমান্তপথ রাফাহ ক্রসিং উপত্যকার সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। গাজা থেকে বের হওয়ার আরও দুটি সীমান্তপথ রয়েছে, কিন্তু সেগুলো ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে এবং ইসরায়েলের ইচ্ছা অনুযায়ী সেগুলো খোলা বা বন্ধ থাকে।

৩৬৫ কিলোমিটার আয়তনের ভূখণ্ড গাজায় বসবাস করেন প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি। যাদের এক তৃীতিয়াংশেরও বেশি সরাসরি জাতিসংঘ ও অন্যান্য দাতা দেশ ও সংস্থার ত্রাণ এবং আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। অপর দুই সীমান্ত প্রায় সময়েই বন্ধ থাকায় এই রাফাহ ক্রসিং দিয়েই গাজা ভূখণ্ডে প্রবেশ করে ত্রাণ। এ কারণে এই ক্রসিংটি গাজার ফিলিস্তিনিদের ‘লাইফ লাইন’ নামেও পরিচিত।

গত ৭ অক্টোবর ভোররাতে ইসরায়েল ও গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালায় গাজার নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস। সীমান্তের  বেড়া বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করেন শত শত প্রশিক্ষিত হামাস যোদ্ধা।

ইসরায়েলে ঢুকে প্রথমেই কয়েক শ বেসামরিক লোকজনকে নির্বিচারে হত্যা করেন তারা, সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ২১২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিককে জিম্মি হিসেবে ধরে যায় হামাস যোদ্ধারা।

এ ঘটনায় সেদিন থেকেই গাজা উপত্যকায় বিমান অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। সেই সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় গাজার বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ।

প্রায় একই সময় রাফাহ ক্রসিং এলাকায়ও বোমাবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েল। এতে গত ৯ অক্টোবর মিসর ওই সীমান্তপথ বন্ধ করে দেয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর অভিযানে ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত উপত্যকায় নিহত হয়েছেন ৮ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং এই নিহতদের ৪০ শতাংশ শিশু এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক।

একদিকে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর টানা অভিযান আর অন্যদিকে খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রীর সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েন গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা।

এ পরিস্থিতিতে গত ১৮ অক্টোবর ইসরায়েল সফরে যান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ পরিস্থিতিতে গত ১৮ অক্টোবর ইসরায়েল সফরে যান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল সিসিকে রাফাহ ক্রসিং খুলে দিতে বলেন। তার সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত ২১ অক্টোবর সেই ক্রসিং খুলেও দেয় মিসর।

কিন্তু যুদ্ধ চলতে থাকায় গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করতে পারছে না ট্রাকগুলো। রাফাহ ক্রসিং কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যেখানে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে গাজায় প্রতিদিন প্রায় ৫০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করে, সেখানে গত ২১ অক্টোবর থেকে প্রবেশ করেছে মাত্র ১১৭টি ট্রাক।

গাজায় ত্রাণের সরবরাহ স্বাভাবিক করতে সেখানে যুদ্ধবিরতির ডাক দিয়েছে রাশিয়া ও চীন, অন্যদিকে মানবিক বিরতির আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স।

কিন্তু ইসরায়েল দৃশ্যত এই দুই আহ্বানের কোনোটিকেই পাত্তা দিচ্ছে না।

সূত্র : এএফপি

এসএমডব্লিউ