মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন, ছবি : রয়টার্স

সিরিয়ায় ইরানের দু’টি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে মার্কিন বিমান বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশেরই এই হামলা চলানো হয়েছে বলে বৃস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তর পেন্টাগনে আয়োজিত সেই সংবাদ সম্মেলনে অস্টিন জানান, এই স্থাপনা দু’টি ইরানের সেনাবাহিনীর এলিট গ্রুপ ইসলামিক রেভোল্যুশনারি গার্ড এবং ইরানের মদদপুষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো ব্যবহার করত।

ইরান যদি ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধের ‘সুযোগ নিয়ে’ মার্কিন বাহিনীকে আক্রমণ করে, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা আরও পরিচালিত হবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কোনো সংঘাত চায় না এবং মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধপরিস্থিতিকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে বা পরিকল্পনা আমাদের নেই।’

‘কিন্তু ইরান এই যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চাইছে। তাদের মদদপুষ্ট গোষ্ঠীগুলো এক দিকে আমাদের ঘাঁটিগুলোতে চোরাগুপ্তা হামলা চালাচ্ছে এবং এর মাধ্যমে যুদ্ধকে আরও বিস্তৃত করতে চাইছে; অন্যদিকে ইরান প্রকাশ্যে এসব হামলায় নিজেদের দায় অস্বীকার করছে।’

‘ইরানকে সতর্কবার্তা দিয়ে বলছি, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর হামলা— দু’টি আলাদা ব্যাপার। যদি মার্কিন ঘাঁটির ওপর হামলা অব্যাহত থাকে, তাহলে আমরাও আমাদের জনগণকে বাঁচাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো।’

গত ৭ অক্টোবর গাজার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত ইরেজ ক্রসিংয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে কয়েক শ প্রশিক্ষিত হামাস যোদ্ধ। ঢোকার পর সেখানে কয়েকশ বেসামরিক মানুষকে হত্যার পাশাপাশি ২২০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জিম্মি হিসেবেও ধরে নিয়ে যায় তারা।

এই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় বিমান অভিযান পরিচালনা শুরু করে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী, যা এখনও চলছে। গত ২০ দিনের এই যুদ্ধে ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক এবং গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭ হাজার।

এদিকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধ বাঁধার পর থেকেই ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে রকেট ও ড্রোন হামলা বাড়ছে। প্যাট রাইডার জনান, গত ১৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইরাকের বিভিন্ন মার্কিন ঘাঁটিতে ১২ বার এবং সিরিয়ার ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে অন্তত ৪ বার রকেট ও ড্রোন হামলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে অস্টিন বলেছেন, এসব হামলার সঙ্গে ইরানের রেভোল্যুশনারি গার্ড, হিজবুল্লাহ ও ইসলামিক জিহাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

এদিকে আগের দিন বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলার জেরে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনিকে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছেন তিনি।

হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বার্তায় আমি আয়তুল্লাহকে বলেছি, ইসরায়েল ইস্যুতে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই এবং তারা যদি মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলা অব্যাহত রাখে, তাহলে আমরাও তাতে সাড়া দেবো।’

প্রসঙ্গত, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তাই কোন প্রক্রিয়ায় তিনি এই বার্তা পাঠিয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। বাইডেনও অবশ্য এ ব্যাপারে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি।

সূত্র : আলজাজিরা, এসএমডব্লিউ

এসএমডব্লিউ