পেন্টাগনের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট রাইডার

ইসরায়েল-হামাসের চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন এবং ইরাক ও সিরিয়ায় নিজেদের সামরিক ঘাঁটিগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মধ্যপ্রাচ্যে আরও ৯০০ সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এই সেনা সদস্যরা বিমান অভিযান এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স ব্যাটারি) পরিচালনায় বিশেষভাবে দক্ষ।

গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পরপরই ২ হাজার মেরিন সেনার একটি দল মধ্যপ্রাচ্যে পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে এই দলটি ভূমধ্যসাগরের ইসরায়েলি উপকূলে অবস্থান করছে।

বৃহস্পতিবার দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি ও মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট রাইডার বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, এই সেনাদের একটি অংশ ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে পৌঁছে গেছেন; বাকিরাও শিগগিরই যাবেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্যাট রাইডার জানান, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের ধারাবাহিক সন্ত্রাসী হামলা ঠেকানো, আঞ্চলিক সংঘাত নিয়ন্ত্রণ এবং মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের সামরিক ঘাঁটিতে থাকা সেনাসদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই সেনাদের সেখানে পাঠানো হচ্ছে।’

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে স্থাপিত নিজেদের ঘাঁটিগুলোতে ৩ ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এগুলো হলো টার্মিনাল হাই অল্টিচ্যুড এরিয়া ডিফেন্স (থাড) ব্যাটারি, প্যাট্রিয়ট মিসাইল প্ল্যাটফরম এবং অ্যাভেঞ্জার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। যে ৯০০ সেনাসদস্য মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছেন, তারা এই তিন ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনায় দক্ষ বলে জানিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট রাইডার।

‘এই সেনাদের মূল কাজ হবে আঞ্চলিক সহিংসতা প্রতিরোধ করা,’ সংবাদ সম্মেলনে বলেন রাইডার। তবে কোন কোন ঘাঁটিতে তাদের রাখা হবে— সে সংক্রান্ত কোনো ইঙ্গিত দেননি তিনি।

গত ৭ অক্টোবর গাজার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত ইরেজ ক্রসিংয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে কয়েক শ প্রশিক্ষিত হামাস যোদ্ধ। ঢোকার পর সেখানে কয়েকশ বেসামরিক মানুষকে হত্যার পাশাপাশি ২২০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জিম্মি হিসেবেও ধরে নিয়ে যায় তারা।

এই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় বিমান অভিযান পরিচালনা শুরু করে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী, যা এখনও চলছে। গত ২০ দিনের এই যুদ্ধে ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক এবং গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭ হাজার।

এদিকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধ বাঁধার পর থেকেই ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে রকেট ও ড্রোন হামলা বাড়ছে। প্যাট রাইডার জনান, গত ১৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইরাকের বিভিন্ন মার্কিন ঘাঁটিতে ১২ বার এবং সিরিয়ার ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে অন্তত ৪ বার রকেট ও ড্রোন হামলা হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে সক্রিয় ও ইরানের মদদপুষ্ট বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠী এসব হামলার জন্য দায়ী বলে জানিয়েছেন পেন্টাগন মুখপাত্র।

প্রসঙ্গত, ইতোমধ্যে ভূমধ্যসাগরের ইসরায়েলি উপকূলে ২ হাজার মেরিন সেনা মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত লেবাননভিত্তিক রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে সতর্কবার্তা দিতেই মোতায়েন করা হয়েছে এই মেরিন সেনাদের।

ইরানের সরাসরি মদদপুষ্ট হিজবুল্লাহ ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধে হামাসের পক্ষে অংশগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করার পরই ভূমধ্যসাগরে এই মেরিন সেনাদের মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।  

সূত্র : আরটি, এএফপি

এসএমডব্লিউ