ফিলিস্তিনিদের ভোগান্তিতে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিমুখী নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন জর্ডানের রানি রানিয়া আল আবদুল্লাহ। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অবিরাম বোমাবর্ষণে ফিলিস্তিনিদের হত্যায় নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হওয়ায় পশ্চিমাদের সমালোচনা করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে পশ্চিমাদের দ্বৈত নীতির এই সমালোচনা করেন তিনি।

সিএনএন বলছে, জর্ডানের রানি রানিয়া আল আব্দুল্লাহ ইসরায়েলে হামলার জন্য গাজার ক্ষমতাসীনগোষ্ঠী হামাসের নিন্দা জানাতে অস্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের ভোগান্তিতে পশ্চিমাদের দ্বিমুখী নীতিকে দায়ী করেছেন তিনি।

জর্ডানের এই রানি বলেছেন, সংঘাতের শুরুর দিকে সিএনএনের ওয়েবসাইটে ইসরায়েলের কিব্বুৎজ শহরে শিশুদের হত্যা করা হয়েছে শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। আপনি এই প্রতিবেদন পড়লে বুঝতে পারবেন শিশুদের হত্যার তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়নি।

সিএনএনের প্রখ্যাত সাংবাদিক ক্রিশ্চিয়ান আমানপোর জর্ডানের রানির এই অভিযোগের জবাবে বলেন, দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার সময় শিশু এবং অন্যান্য সকল বয়সী লোকজনকে হত্যায় বর্বরতার প্রচুর প্রমাণ রয়েছে।

এ সময় ফিলিস্তিনিদের ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে নজর দিতে বলেন রানি রানিয়া। তিনি বলেন, গাজায় গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ফিলিস্তিনিদের ওপর ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে এসেছে। রানিয়া বলেন, জর্ডানসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ, এই বিপর্যয়ের বিষয়ে বিশ্বের প্রতিক্রিয়া দেখে আমরা হতবাক এবং হতাশ। গত কয়েক সপ্তাহে আমরা বিশ্বে পশ্চিমাদের পরিষ্কার দ্বৈত নীতির প্রয়োগ দেখেছি।

‘৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পরপরই বিশ্ব নেতারা দ্ব্যর্থহীনভাবে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে বলে মন্তব্য করেছেন। ইসরায়েলে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন তারা। কিন্তু গাজায় যে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চলছে, তার নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন পশ্চিমারা। গত কয়েক সপ্তাহে আমরা বিশ্বে নীরবতা দেখছি।’

গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হওয়ার একদিন পর গাজা উপত্যকায় সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল। এই অবরোধ আরোপের কারণে গাজায় বিদ্যুৎ, খাবার, ওষুধ, পানি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর চালান সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ গাজায় ইসরায়েলের সর্বাত্মক অবরোধের তীব্র সমালোচনা করে সেখানে মানবিক ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

ইতিমধ্যে কয়েক দফায় খাবার, পানি, ওষুধসহ অন্যান্য কিছু পণ্য সামগ্রীবাহী ট্রাককে মিসরের রাফাহ সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে ইসরায়েল। বুধবার জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, জ্বালানির তীব্র সংকটের কারণে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে গাজা। এই উপত্যকায় জ্বালানির সরবরাহের অনুমতি দেওয়া না হলে জাতিসংঘ ত্রাণ তৎপরতা বন্ধ করে দেবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে সংস্থাটি।

হামাসের সাথে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৬ হাজার ৫৪৬ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ২ হাজার ৭০৪ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় গাজা উপত্যকায় রেকর্ড ৭৫৬ ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে।

১৯ দিন ধরে চলে আসা এই যুদ্ধে আহত হয়েছেন ১৭ হাজার ৪৩৯ ফিলিস্তিনি। এর আগে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় একদিনে সর্বোচ্চ ৭০৪ জনের প্রাণহানির ঘটনার রেকর্ড হয়েছিল সোমবার। অন্যদিকে, হামাসের হামলায় ইসরায়েলিদের প্রাণহানির সংখ্যা ১ হাজার ৪০৫ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর ৩০৮ সৈন্য ও ৫৮ পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। এছাড়া হামাসের অব্যাহত হামলায় ইসরায়েলে আহত হয়েছেন আরও ৫ হাজারের বেশি মানুষ।

সূত্র: সিএনএন, টাইমস অব ইসরায়েল।

এসএস