গাজায় যুদ্ধবিরতি কেবল হামাসকে সাহায্য করবে : হোয়াইট হাউস
টানা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত চলছে। সংঘাতের শুরু থেকেই অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী।
হামলায় গাজায় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে অন্তত আড়াই হাজার শিশু রয়েছে। এই মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে দাবি উঠছে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, গাজায় পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর করলে সেটি কেবল হামাসকেই সাহায্য করবে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (২৫ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় পূর্ণমাত্রার যুদ্ধবিরতি কেবল হামাসকে সাহায্য করবে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। তবে তাদের দাবি, গাজায় অত্যাবশ্যক সহায়তা দেওয়ার জন্য চলমান ইসরায়েলি হামলায় মানবিক ‘বিরতি’ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।
এএফপি বলছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের অবিরাম বোমাবর্ষণের শিকার হওয়া ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ত্রাণ বিতরণ ‘যথেষ্ট দ্রুতগতিতে করা হয়নি’ বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মন্তব্য করার পর হোয়াইট হাউসের এই বক্তব্য সামনে এলো।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘গাজায় এখন যুদ্ধবিরতি হলে সেটি আসলেই শুধুমাত্র হামাসের উপকার করবে।’
কিরবি বলেন, ওয়াশিংটন পূর্ণ যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করলেও মানবিক সাহায্য সরবরাহের সুবিধার্থে লড়াই কিছুটা থামানোর ‘বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত’। তিনি বলেন, ‘আমরা বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সকল ধরনের পদক্ষেপ নিতে চাই এবং সামরিক অভিযানে বিরতি একটি কৌশল হিসেবে সাময়িক সময়ের জন্য হতে পারে।’
তবে তার দাবি, ‘এটাকে যুদ্ধবিরতি বলা যাবে না।’
এদিকে মঙ্গলবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারাও চলমান যুদ্ধে কিছুটা বিরতির আহ্বান জানানোর কথা বিবেচনা করছেন।
আরও পড়ুন
প্রসঙ্গত, মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে গত ৭ অক্টোবর ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে একটি অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। হামাসের এই অভিযানে কার্যত হতবাক হয়ে পড়ে ইসরায়েল।
হামাসের এই হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৪০০ ইসরায়েলি। নিহতদের মধ্যে ২৮৬ জন সেনাসদস্য রয়েছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। হামাসের হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৪ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি। এছাড়া আরও দুই শতাধিক মানুষকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস।
হামাসের হাতে আটক বিপুল এসব বন্দির মধ্যে ইসরায়েলি-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিকও রয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজায় আটক সব বন্দির নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন। এছাড়া মানবাধিকার গোষ্ঠী, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বন্দিদের পরিবারও তাদের অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন গত সোমবার বলেন, যুদ্ধবিরতির ‘আলোচনা’ কেবল তখনই শুরু হতে পারে যখন হামাসের হাতে আটক থাকা ২০০ জনেরও বেশি বন্দি মুক্তি পাবে।
আরও পড়ুন
এদিকে জন কিরবি দাবি করেছেন, গাজায় বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে অনুরোধ করলেও নারী ও শিশুসহ বেসামরিক মানুষের হতাহত হওয়ার কিছু ঘটনা অনিবার্য ছিল।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। তাদের অবিরাম হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার।
এছাড়া ইসরায়েলের হামলায় গাজায় শুধুমাত্র গত একদিনে ৭০৪ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
টিএম