গত ১৭ দিন ধরে চলা যুদ্ধে বিধ্বস্ত ও গুরুতর বিদ্যুৎ সংকটে ভুগতে থাকা গাজা উপত্যকায় আপতত জ্বালানি তেল প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এমনকি উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস যদি তার হাতে থাকা সব জিম্মিকে মুক্ত করে দেয়, তবুও নয়।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মার্ক রেগেভ সোমবার সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তথ্য জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা গাজা উপত্যকায় ওষুধ, খাদ্য,পানি ও চিকিৎসা উপকরণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছি। আপাতত আর কোনো কিছু সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। বিশেষ করে জ্বালানি একেবারেই নয়।’

‘কারণ পুরো উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করে হামাস এবং এবং যদি আমরা গাজায় জ্বালানি তেল প্রবেশ করতে দিই, সেক্ষেত্রে হামাস সেই তেল চুরি করে নিজেদের সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহার করবে।’

‘আরও স্পষ্ট করে বললে, হামাস এই তেল চুরি করে তা নিজেদের রকেট হামলার জন্য ব্যবহার করবে। আমরা ইসরায়েলের জনগণকে নতুন কোনো হামলার ঝুঁকিতে ফেলতে চাই না। এমনকি তারা যদি জিম্মিদের মুক্ত করে দেয়, তবুও নয়। এ ব্যাপারে জেরুজালেমের অবস্থান কঠোর।’

গত ৭ অক্টোবর হামাসের অতর্কিত হামলার জবাবে ওই দিন থেকেই ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। সেই সঙ্গে গাজার বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়, বন্ধ করে দেওয়া হয় মিসর ও গাজার মধ্যকার সীমান্তপথ রাফাহ ক্রসিং—যা এই উপত্যকায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের কাছে ‘লাইফ লাইন’ নামে পরিচিত।

৩৬৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের উপত্যকা গাজায় বসবাস করেন প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি। দারিদ্র্য ও বেকারত্বপীড়িত এই ফিলিস্তিনিদের এক তৃতীয়াংশ সরাসরি জাতিসংঘ ও অন্যান্য দাতা দেশ ও সংস্থার ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।

রাফাহ ক্রসিং বন্ধ থাকায় দু’সপ্তাহ কোনো ত্রাণ প্রবেশ করতে পারেনি গাজায়। ফলে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলায় বিধ্বস্ত সেই উপত্যকায় ব্যাপক মানবিক বিপর্যয় শুরু হওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়।

এ পরিস্থিতিতে শনিবার রাফাহ ক্রসিং খুলে দিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। সেই ক্রসিং এই কয়েক দিনে দিয়ে খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী প্রবেশ করলেও জ্বালানি তেলবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

এদিকে, জ্বালানি তেলের অভাবে বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে গাজা। উপত্যকার একমাত্র বিদ্যুৎ স্টেশনটি বন্ধ হয়ে গেছে গত ১০ দিন আগে। হাসপাতালগুলোতেও চিকিৎসা সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।

সোমবার জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার হাসপাতালগুলোতে আর মাত্র ৩ দিন চলার মতো জ্বালানি অবশিষ্ট রয়েছে।

রেগেভ অবশ্য দাবি করেছেন যে তারা রাফাহ ক্রসিং দিয়ে জ্বালানি তেল প্রবেশ করতে দিয়েছিলেন, কিন্তু ক্রসিং এলাকাতেই বন্দুকের মুখে সেই তেলের অল্প কিছু রেখে বেশিরভােই ছিনতাই করে নিয়ে গেছে হামাস।

তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ক্রসিং দিয়ে গাজায় এখনও কোনো তেলবাহী ট্রাক প্রবেশ করেনি।