গ্রীক অর্থোডক্স চার্চে ইসরায়েলি বোমা হামলার পর কাঁদছেন এক নারী

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একটি গ্রীক অর্থোডক্স গির্জায় বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই হামলায় কমপক্ষে আটজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। এছাড়া আরও কয়েক ডজন মানুষের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ইসরায়েলি হামলার শিকার এই গির্জাটি গাজার সবচেয়ে পুরোনো এবং কয়েক শতাব্দী আগে নির্মিত। এদিকে ইসরায়েল গাজায় ‘গণহত্যার’ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে বলে অভিযোগ করেছে ফিলিস্তিনি চার্চ কমিটি।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এবং টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

আল জাজিরা বলছে, গাজায় একটি গ্রীক অর্থোডক্স গির্জায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে আটজনে দাঁড়িয়েছে এবং হামলায় আরও কয়েক ডজন মানুষের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ফিলিস্তিনি বার্তাসংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, গাজার আল-জায়তুন এলাকায় সেন্ট পোরফিরিয়াস চার্চে হামলায় নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। ওয়াফা বলছে, নিহত ও আহতের সংখ্যা এখনও বাড়তে পারে।

এদিকে ঘটনাস্থলে থাকা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ফিলিস্তিনি এই নিউজ এজেন্সি বলেছে, বোমা হামলার ফলে চার্চ স্টুয়ার্ডস কাউন্সিলের ভবন সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে। সেই ভবনে বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিনি পরিবার - তাদের মধ্যে খ্রিস্টান এবং মুসলিম উভয়ই ছিল - ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের মধ্যে গির্জায় আশ্রয় নিয়েছিল।

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে আল জাজিরা আরবির পোস্ট করা একটি ভিডিও ক্লিপে দুইজন আহত ব্যক্তিকে গাজার একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে অ্যাম্বুলেন্সে করে নেওয়া হচ্ছে বলে দেখা যায়।

এদিকে ইসরায়েল গাজায় ‘গণহত্যার’ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে বলে অভিযোগ করেছে ফিলিস্তিনি চার্চ কমিটি। ফিলিস্তিনের হাইয়ার কমিটি ফর চার্চ অ্যাফেয়ার্স-এর প্রধান বলেছেন, গাজায় গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের ওপর ইসরায়েলের বোমাবর্ষণের মতো কাণ্ড ‘ফিলিস্তিনি জনগণকে ধ্বংস করার ইসরায়েলি অভিপ্রায়কেই’ তুলে ধরছে।

এদিকে গাজার সেন্ট পোরফিরিয়াস গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের প্রাঙ্গনে ইসরায়েলি বোমা হামলার নিন্দা করেছেন রামজি খৌরি। শুক্রবার ভোরে গির্জার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে এই নিন্দা করেন তিনি। হামলার সময় ওই গির্জায় প্রায় ৫০০ ফিলিস্তিনি মুসলমান এবং খ্রিস্টান আশ্রয় নিয়েছিলেন।

এতে আরও বলা হয়, চার্চের কাউন্সিল ভবনকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলাটি চালানো হয়। বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, ‘উপাসনালয়ের মতো স্থানগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো আসলে একটি যুদ্ধাপরাধ এবং যুদ্ধের নামে উপাসনালয়গুলোতে কোনও অবস্থাতেই আক্রমণ করা যাবে না বলে আন্তর্জাতিক আইনেও স্পষ্ট করে দেওয়া আছে।’

শুক্রবার ভোরে দেওয়া এই বিবৃতিতে চার্চের ঐতিহাসিক গুরুত্বও তুলে ধরা হয়েছে।

টিআরটি ওয়ার্ল্ড বলছে, গাজার আল আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতাল থেকে মাত্র মিটার দূরে এই চার্চটি অবস্থিত। গত মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েল ওই হাসপাতালে বোমা বর্ষণের মাধ্যমে ভয়ঙ্কর গণহত্যা চালায়।’

আল জাজিরা বলছে, ইসরায়েলি হামলার শিকার গাজার সেন্ট পোরফিরিয়াস গির্জাটি দুই সপ্তাহ আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে খ্রিস্টান এবং মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের ফিলিস্তিনিদের কাছে আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।

এছাড়া হামলার শিকার গির্জার ভবনটির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এটি ১১৫০ সাল ১১৬০ সালের মধ্যে ক্রুসেডারদের মাধ্যমে নির্মিত হয়েছিল এবং গাজার পঞ্চম শতাব্দীর বিশপের নামে নামকরণ করা হয়েছিল।

অন্যদিকে গির্জা কম্পাউন্ডে হামলার কয়েকদিন আগে গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের পুরোহিত ফাদার ইলিয়াস ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ইসরায়েল হয়তো এই গির্জাকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে।

সেসময় তিনি বলেছিলেন, গির্জার ওপর কোনও হামলা হলে তা শুধু ধর্মের ওপরই আক্রমণ হবে না, এটি মানবতার ওপরও আক্রমণ হবে। যা একটি জঘন্য কাজ।’

টিএম