হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের উত্তেজনা
এবার সিরিয়ায় মার্কিন সৈন্যদের অবস্থানে ড্রোন হামলা
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীনগোষ্ঠী হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। গাজার এক হাসপাতালে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ৫০০ ফিলিস্তিনির মৃত্যুর পর ক্ষোভে ফুঁসছে পুরো মধ্যপ্রাচ্য। এর মাঝে সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলের একটি তেল স্থাপনায় ড্রোন হামলা হয়েছে; যেখানে ইসরায়েলের অন্যতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের আবাস রয়েছে। এছাড়া আক্রান্ত তেল স্থাপনার কাছাকাছি এলাকায় একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে। এর আগে বুধবার ইরাকে মার্কিন আল-আসাদ বিমান ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা হয়।
বৃহস্পতিবার সিরিয়ার সরকারবিরোধী কর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের অবস্থানে হামলার এই তথ্য জানিয়েছেন বলে খবর দিয়েছে মার্কিন বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)। তবে হামলায় কোনও হতাহত হয়েছে কি না তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। আর হামলার তথ্য নিশ্চিত করার বিষয়ে জানতে চাইলেও মার্কিন সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।
বিজ্ঞাপন
সংবাদমাধ্যম দেইরএজোর টোয়েন্টি ফোরের প্রধান ওমর আবু লায়লা বলেছেন, ইরাক সীমান্ত লাগোয়া সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় দেইর আল-জোর প্রদেশের কনোকো গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরক বোঝাই তিনটি ড্রোন আঘাত হেনেছে।
সিরিয়ার মানবাধিকার পর্যবেক্ষণকারী ব্রিটেন-ভিত্তিক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের রামি আব্দুর রহমান কনোকো গ্যাসক্ষেত্রে পাঁচটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন। প্রতিবেশি তিন দেশ সিরিয়া, জর্ডান এবং ইরাকের সীমান্ত রয়েছে পূর্ব সিরিয়ার তানফ এলাকায়। ওই এলাকায় মার্কিন একটি সামরিক ঘাঁটিতে তিনটি ড্রোন হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটেন-ভিত্তিক এই মানবাধিকার সংস্থা।
সংস্থাটি বলেছে, লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই দুটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে মার্কিন সৈন্যরা। আর তৃতীয় ড্রোনটি সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। এতে ঘাঁটির কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস ও আবু লায়লা বলেছেন, ইরান-ভিত্তিক যোদ্ধারা এই হামলা চালিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে; যারা পূর্ব সিরিয়া এবং পশ্চিম ইরাকে মোতায়েন রয়েছেন।
গত সপ্তাহে ইরানের সাথে সংশ্লিষ্ট ইরাকি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো গাজায় হামাসের সাথে ইসরায়েলের বিরোধে ওয়াশিংটন হস্তক্ষেপ করলে ওই অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন দিয়ে মার্কিন স্বার্থকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে বলে হুমকি দেয়। মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলে বিমান প্রতিরক্ষা এবং যুদ্ধাস্ত্র পাঠিয়েছে পেন্টাগন। তবে পেন্টাগন বলছে, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন সৈন্যদের মধ্য থেকে ২ হাজার সৈন্যের একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই সৈন্যদের হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধে তেল আবিবকে পরামর্শ এবং আহতদের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার জন্য ইসরায়েলে মোতায়েন করা হবে।
এর আগে, বুধবার ভোরের দিকে ইরাকের আল-আসাদ বিমান ঘাঁটিতে আঘাত হানার চেষ্টা করেছে একমুখী দুটি ড্রোন। ওই ঘাঁটিতে মার্কিন সৈন্যদের আবাস রয়েছে। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় ৫০০ ফিলিস্তিনির মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টার মাঝে ইরাকে মার্কিন সৈন্যদের অবস্থানে এই হামলা হয়। হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সমর্থন জানাতে বুধবার ইসরায়েল সফর করা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য এ ধরনের হামলা নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে ইরাকে তুমুল উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। দেশটির শীর্ষ শিয়া নেতা আয়াতুল্লাহ আলি আল-সিস্তানি গত সপ্তাহে ইসরায়েলের নিন্দা এবং গাজায় ‘ভয়াবহ বর্বরতার’ বিরুদ্ধে বিশ্বকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। ইরাকি সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতারা হাসপাতালে হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা করেন।
ইরানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে ইরাকের শক্তিশালী সশস্ত্রগোষ্ঠী কাতাইব হিজবুল্লাহর। গাজায় ‘নিরীহ মানুষ হত্যায়’ ইসরায়েলকে সমর্থন করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইরাক থেকে চলে যাওয়া উচিত বলে সতর্ক করে দিয়েছে এই গোষ্ঠীটি। মঙ্গলবার গভীর রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে কাতাইব হিজবুল্লাহ বলেছে, ‘এই শয়তানদের অবশ্যই ইরাক ছেড়ে চলে যেতে হবে। অন্যথায় তারা পরকালের আগে এই পৃথিবীতে নরকের আগুনের স্বাদ পাবে।’
বর্তমানে ইরাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আড়াই হাজার সৈন্য রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেশি সিরিয়ায় আরও অতিরিক্ত ৯০০ মার্কিন সেনা রয়েছে। উভয় দেশে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্থানীয় বাহিনীকে পরামর্শ ও সহায়তা করার মিশনে নিযুক্ত রয়েছে এই সৈন্যরা। ২০১৪ সালে সিরিয়া এবং ইরাকের বিশাল ভূখণ্ড দখল করেছিল আইএস।
সূত্র: এপি, রয়টার্স।
এসএস