ফিলিস্তিনের রাজধানী পূর্ব জেরুজালেম থেকে ৪৯ কিলোমিটার উত্তরে পশ্চিম তীরের নাবলুস শহর। বুধবার এই শহরে ইসরায়েলি বসতিস্থাপনকারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন ইব্রাহিম ওয়াদি (৬২) এবং তার ছেলে আহমাদ (২৪)।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, বুধবার ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন ইব্রাহিম ওয়াদির চার আত্মীয়। তাদের জানাজায় অংশ নেওয়ার জন্য নিজেদের ব্যক্তিগত গাড়িতে রওনা দিয়েছিলেন ইব্রাহিম ওয়াদি ও আহমাদ। যাত্রাপথে নাবালুস শহরের দক্ষিণাঞ্চলীয় গ্রাম কুসরায় চলন্ত গাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে পিতা-পুত্রের।

গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের সংগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) চলমান যুদ্ধের আঁচ পৌঁছেছে পশ্চিম তীরেও। গত ১২ দিনে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী ও বসতি স্থাপনকরীদের গুলিতে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৬১ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ২৫০ জন ফিলিস্তিনি। বুধবার সেই নিহতের তালিকায় যুক্ত হলো ইব্রাহিম ওয়াদি ও তার ছেলে আহমাদের নামও।

মধ্যপ্রাচ্যের আল আকসা অঞ্চলে গত ১২ দিন ধরে যুদ্ধ চলছে হামাস ও আইডিএফের মধ্য। গত ৭ অক্টোবর শনিবার ইসরায়েলে হামাসের অতর্কিত হামলা ও সীমান্ত বেড়া ভেঙ্গে অনুপ্রবেশের মধ্যে দিয়ে এই যুদ্ধের সুত্রপাত।

প্রাথমিক গোয়েন্দা তথ্য ও প্রস্তুতির অভাবে যুদ্ধের শুরুর দিকে খানিকটা অপ্রস্তুত অবস্থায় থাকলেও অল্প সময়ের মধ্যেই পূর্ণ শক্তি নিয়ে ময়দানে নামে ইসরায়েল এবং হামাসের এই হামলার জবাবে শনিবার থেকেই গাজা উপত্যকায় পাল্টা অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী।

যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত হামাসের হামলায় নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি। এছাড়া হামলার প্রথম দিনই ইসরায়েল থেকে দেড় শতাধিক বেসামরিক ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিককে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে গেছে হামাস। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখনও অজানা।

অন্যদিকে, গত ১২ দিন ধরে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত বোমা বর্ষণে গাজায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩ হাজার ৪৭৮ জনে এবং আহত হয়েছেন ১০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি।

গাজা উপত্যকার এই সংঘাতের সংবাদ পশ্চিম তীরে পৌঁছালে স্বাভাবিকভাবেই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সেখানে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা এবং তাদের এই বিক্ষোভ দমন করতে ইসরায়েলের পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর পাশপাশি তৎপর হয়ে ওঠে বসতি স্থাপনকারীরাও।

নাবালুস শহরে বিক্ষোভের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে কুসরা গ্রামটি। ওই গ্রামের মেয়র হানি ওদেহ সিএনএনকে বলেন, বুধবার তার গাড়িতেও হামলা হয়েছে এবং সে সময় গাড়িতে ছিলেন তিনি। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন।

সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে কুসরায় বসতি স্থাপনকারীরা মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের বেশিরভাগই সশস্ত্র। ইসরায়েলি পুলিশ তাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে।’

‘গতকাল একটি বিশেষ কাজে আমার কুসরার বাইরে যাওয়ার দরকার ছিল। আমি কোগাটকে (ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের কর্তৃপক্ষ কো অর্ডিনেশন অব গভর্নমেন্ট অ্যাক্টিভিটিজ ইন দ্য টেরিটোরিজ) এ ব্যাপারে অবহিত করলাম এবং জবাবে তারাও সবুজ সংকেত দিলো।’

‘কিন্তু নিজ গাড়িতে যাত্রা শুরুর কিছুক্ষণ পরেই আমার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হলো। আমি গাড়ি থামিয়ে সড়কে টহলরত ইসরায়েলি সেনাদের এ ব্যাপারে জানালাম, কিন্তু তারা আমাকে পাত্তাই দিতে চাইল না।’

এ ব্যাপারে আরও তথ্য জানতে কোগাট ও আইডিএফের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল সিএনএন, তবে এই দুই সংস্থার কোনো কর্মকর্তাই এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হননি।

এসএমডব্লিউ