রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও শরীরে রয়েছে করোনা, নতুন ধরনে আতঙ্ক
করোনাভাইরাসের কারণে অনেকটা টালমাটাল অবস্থায় সারা বিশ্ব। বিশ্বব্যাপী প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক মানুষের শরীরে শনাক্ত হচ্ছে করোনাভাইরাস। কিন্তু পরীক্ষায় যাদের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে না অর্থাৎ রিপোর্ট নেগেটিভ; তারা কী নিরাপদ? আপাত দৃষ্টিতে নিরাপদ মনে হলেও ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় এই ধারণা উল্টে যেতে বসেছে।
করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ আসলেও অনেকের শরীরে রয়েছে করোনাভাইরাস, অর্থাৎ তারা পজিটিভ। একটা বার দুইটি নয়; এমনটা হচ্ছে অহরহ। করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও তাই পুরোপুরি নিশ্চিত হতে করাতে হবে সিটি স্ক্যান, এমনটাই বলছেন চিকিৎসকরা।
বিজ্ঞাপন
ভারতের ন্যাশনাল অ্যালার্জি অ্যাজমা ব্রঙ্কাইটিস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অলোক গোপাল ঘোষাল জানিয়েছেন, সিটি স্ক্যান অনেক সূক্ষ্ম বিচার করতে সক্ষম। অনেক ক্ষেত্রেই এখন আরটিপিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে সিটি স্ক্যানে তা শনাক্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট আছে। সিটি স্ক্যানে যদি দেখা যায়- রোগীর বুকে ওই ধরনের বৈশিষ্ট বিদ্যমান, সঙ্গে সঙ্গে তাকে হোম আইসোলেশনে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া প্রাথমিক ভাবে মাল্টি-ভিটামিন, জিংক ট্যাবলেট খাওয়ারও পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট (আরএটি) অথবা আরটিপিসিআর টেস্ট, এতদিন এই দুটিই ছিল করোনা শনাক্তের মাধ্যম। তবে ভাইরাসের নতুন ধরনে আর তেমনটি হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে কিন্তু বাড়ি ফিরে ফের জ্বর এসেছে ওই রোগীর। ইতোমধ্যেই ভারতের গুজরাটে এমন অসংখ্য রোগীর খোঁজ পাওয়া গেছে। খোঁজ মিলেছে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়ও।
চিকিৎসকরা বলছেন, আরটিপিসিআর টেস্টে রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরেও অনেকের কাশি কমছে না। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। সিটি স্ক্যান করতে গিয়ে দেখা গেল, ফুসফুসে গভীর সংক্রমণ। সে কারণেই চিকিৎসকরা অনেক সময় একইসঙ্গে আরটিপিসিআর আর সিটি স্ক্যান করার পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে অনেকেরই সিটি স্ক্যান করার সামর্থ্য নেই।
ডা. অলোক গোপাল ঘোষাল জানিয়েছেন, এমন ক্ষেত্রে দু’বার আরটিপিসিআর টেস্ট করতে হবে রোগীকে। রোগীর যদি জ্বর আসে, তাহলে জ্বর আসার দিন থেকে পাঁচদিন পর দ্বিতীয়বার আরটিপিসিআর টেস্ট করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
তবে সবার আগে বুঝতে হবে করোনা হয়েছে না কি হয়নি? ডা. ঘোষালের কথায়, সিটি স্ক্যান করে যদি দেখা যায়- রোগীর বুকে পানি জমেছে, সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে রোগীর করোনা হয়নি। কিংবা রোগীর যদি নাক দিয়ে বেশি পরিমাণে পানি পড়তে থাকে, তাহলেও তা সাধারণ ফ্লু। কিন্তু বুকে যদি প্যারিফেরাল প্যাচ দেখা যায়, তাহলেই নিশ্চিত যে- করোনাভাইরাস আঁকড়ে ধরেছে ফুসফুস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন এমনই যে আরটিপিসিআর টেস্টে কিছুই ধরা পড়ছে না। এইচআরসিটি বা হাই রেজ্যুলিউশন কম্পিউটেড টোমোগ্রাফিতেই ধরা পড়ছে ফুসফুসের প্রকৃত অবস্থা।
ডা. ঘোষাল জানিয়েছেন, অন্তত সিটিস্ক্যানে রোগীর বুকে পেরিফেরাল প্যাচ দেখা গেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে তাকে হোম আইসোলেশনে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তাতে অসুখটা অন্য কারও মধ্যে ছড়াবে না।
এতোদিন কেবল আরটিপিসিআরে কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া গেলে তারপরই এইচআরসিটি স্ক্যান করে দেখে নেওয়া হতো ফুসফুস ঠিক কতোটা আক্রান্ত হয়েছে।
ভারতের সংক্রমক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হীতেন কেরালিয়া জানিয়েছেন, তাদের দেশে এখন একইসঙ্গে দুটি টেস্ট করতে বলা হচ্ছে। আরটিপিসিআর এর সেন্সিটিভিটি ৭০ শতাংশ। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে ফলস নেগেটিভ রিপোর্ট আসার।
এদিকে শুক্রবার (৯ এপ্রিল) ভারতে এক লাখ ৩১ হাজার ৯৬৮ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যা আগের দিনের থেকে প্রায় ৫ হাজার বেশি। ফলে দেশটিতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার ৫৪২ জনে।
এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৭৮০ জন। এই সংখ্যাটা চলতি বছরে সর্বোচ্চ। এনিয়ে মহামারি শুরুর পর থেকে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৬৭ হাজার ৬৪২ জনে।
ভারতে করোনা মহামারিতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মহারাষ্ট্রে। এর পাশাপাশি কর্ণাটক, কেরালা, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশের পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক।
টিএম