প্রথমে হাজার হাজার রকেট হামলা, পরে সীমান্ত বেষ্টনী উড়িয়ে একের পর এক হামাস যোদ্ধার ইসরায়েলে প্রবেশ। শনিবার ইসরায়েলে হামাসে হামলার শুরুটা ছিল এমনই।  

শুরুতে হামাসের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হলেও পরে একের পর এক বিমান হামলার মাধ্যমে পাল্টা জবাব দিতে শুরু করে ইসরায়েল। 

হামাস ইসরায়েলে ঢুকে দেশটির সেনাবাহিনীকে পরাজিত করবে এমন সক্ষমতা তাদের নেই। আবার ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকা দখল করে দিনের পর দিন সেটা ধরে রাখবে— হামাসের পক্ষে সেটাও সম্ভব না। বাস্তবে সেটা হয়ওনি। এমনকি ইসরায়েলের বিমান হামলা মোকাবিলা করার ক্ষমতাও হামাসের নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে হামাস তাহলে এত সুচিন্তিতভাবে ইসরায়েলে এমন একটি হামলা কেন করতে গেল? 

এ বিষয়ে মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো খালেদ এনগিন্দি বলছেন, হামাস মূলত চায় ফিলিস্তিনের ইস্যুগুলোকে আবারও আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে। গাজার পরিস্থিতি মাঝেমধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। রকেট হামলা হবে এরপর পাল্টা বিমান হামলা। কয়েকদিন পর আবার যুদ্ধ বন্ধ হবে। কিন্তু গাজাবাসীর বাস্তবতার পরিবর্তন হবে না। বছরের পর বছর ধরে এই যে একটা খেলা, হামাস সেটা বদলে দিতে চায়। তারা চায় গাজার চিরস্থায়ী অবরুদ্ধ দশার সমাধান হোক। এমন একটি উপায় বের করা হোক যেটা ইসরায়েলের দখলদারিত্বের সমাপ্তি টানবে। নতুন বসতি স্থাপন বন্ধ করবে।  

হামাস যে উদ্দেশ্যেই হামলা করুক না কেন সেটা কতটা পূরণ হবে তা নিশ্চিত নয়। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত যে, হামাস-ইসরায়েল সংঘাত সাম্প্রতিককালে মধ্যপ্রাচ্যে গড়ে ওঠা নতুন ভূরাজনৈতিক কৌশলকে বদলে দেবে; যেখানে আবার ইরানের লাভ দেখছেন কেউ কেউ।  

তুরস্কের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক মুরাত আসলান বলেন, এই ঘটনায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে ইরান। কারণ ইরানকে পাশ কাটিয়ে ইসরায়েল তুরস্ক, মিসর, বাহরাইনমসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে এনেছিল। কিন্তু এখন এটা হোঁচট খাবে। কারণ ইসরায়েল গাজায় যত বেশি হামলা করবে আরব দেশগুলোর জনমনে তত বেশি ক্ষোভ তৈরি হবে। ফলে সেসব দেশের জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া কঠিন হবে। ইরান সেটাই চায়। 

আরব দেশগুলোর কাছে ফিলিস্তিন সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। এই ইস্যুতে ইসরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর তিনটি যুদ্ধও হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েল আব্রাহাম অ্যাকর্ডের পরে খোদ সৌদি আরবের সঙ্গেও শান্তিচুক্তির দ্বারপ্রান্তে ছিল। এখন সেটা প্রায় অসম্ভব বলে মত দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। 

যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের সিনিয়র ফেলো অ্যারন ডেভিড মিলার বলছেন, হামাস এমন একটা অবস্থা তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে যেখানে ইসরায়েল-সৌদি শান্তি চুক্তি অসম্ভব। মার্কিন মধ্যস্থতায় যে ইসরায়েল-সৌদি শান্তি আলোচনার উদ্যোগ ছিল সেখানে ইসরায়েল কিংবা মোহাম্মদ বিন সালমান কেউই ফিলিস্তিনিদের দাবিকে গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু এখন ফিলিস্তিন ইস্যু ছাড়া সেই চুক্তি অসম্ভব। 

তবে এত কিছুর মধ্যেও মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটা পরিবর্তন ঘটে গেছে। সেটা হচ্ছে— ওই অঞ্চল থেকে ধীরে ধীরে নিজেদের একরকম গুটিয়ে নেওয়া যুক্তরাষ্ট্র আবারও নিজের উপস্থিতি জোরদার করছে। সব কিছু মিলিয়ে হামাসের হামলা মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। কিন্তু এখান থেকে বাস্তবে হামাস নিজেদের জন্য কতটা সুবিধা আদায় করতে পারবে সেটা এখন বড় প্রশ্ন। 

সূত্র : বিবিসি। 

এনএফ