ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। ইসরায়েলি এই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার শরণার্থী ক্যাম্পও। এমনকি ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে কেবল নারী ও শিশুর সংখ্যাই ৭ শতাধিক।

এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল গাজায় ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এছাড়া গাজায় বর্তমানে কোনও নিরাপদ এলাকা নেই বলেও জানিয়েছে গোষ্ঠীটি।

শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালানোর জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছে হামাস। স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীটি বলেছে, ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা প্রদানকারী পশ্চিমা দেশগুলো সংঘাত ও দখলদারিত্বের সমাধানের পরিবর্তে ফিলিস্তিনিদের হত্যায় অংশ নিচ্ছে।

হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গাজী হামাদ ইংরেজিতে দেওয়া এক ভিডিও বিবৃতিতে বলেছেন, ‘(ইসরায়েলের অবিরাম হামলার মুখে) গাজার মানুষের আশ্রয় নেওয়ার জন্য ভূখণ্ডটিতে কোনও নিরাপদ এলাকা নেই।’

তিনি বলেন, ‘গাজার প্রতিটি এলাকা এবং প্রতিটি ভবন ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলার শিকার। নারী, শিশু, বয়স্ক মানুষ এবং এমনকি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সবাই ইসরায়েলের হত্যার লক্ষ্যবস্তু এবং ঝুঁকিতে রয়েছেন।’

প্রসঙ্গত, মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতিস্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে গত শনিবার ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে সামরিক অভিযান শুরু করে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।

এরপর থেকে টানা ছয়দিনের এই সংঘাতে নিহত ইসরায়েলিদের সংখ্যা ১৩০০ ছাড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে বহু সেনাসদস্য, নারী ও শিশু রয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও হাজার হাজার ইসরায়েলি। এছাড়া আরও বহু মানুষকে বন্দি করেছে হামাস।

পরে গত শনিবার থেকে ইসরায়েলের অবিরাম বিমান হামলা গাজার পুরো আশপাশের এলাকাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে এবং কমপক্ষে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও হাজার হাজার আহত হয়েছেন। গাজা ভূখণ্ডে ২৩ লাখ মানুষ বাস করেন এবং সেখানে খাদ্য, জ্বালানি ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর পথ অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল।

বৃহস্পতিবারের এই বিবৃতিতে হামাদ গাজায় ইসরায়েলের ‘অবৈধ ও অনৈতিক’ অবরোধেরও নিন্দা করেন। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি নেতারা তাদের সেনাবাহিনীকে গাজা উপত্যকায় ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিকের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিচ্ছেন। আমরা আধুনিক ইতিহাসে নজিরবিহীন অপরাধের সম্মুখীন হচ্ছি।’

এদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ঘনবসতিপূর্ণ জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্পের একটি আবাসিক ভবনে বোমা হামলা চালিয়েছে। এতে কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত এবং আরও বহু লোক আহত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইয়াদ বোজুম বলেছেন, জাবালিয়া ক্যাম্পের কেন্দ্রস্থলে একটি ভবনে বোমা হামলা হয়েছে। ভবনটি কয়েক ডজন লোকে পরিপূর্ণ ছিল, যাদের মধ্যে কেউ কেউ বিমান হামলার সময় আগের হামলা থেকে পালিয়ে এসেছিল।

জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্প ছাড়াও কেন্দ্রীয় গাজা উপত্যকায় ব্যাপক হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে ভবনগুলো মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার থেকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত এক হাজার ৫৩৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৫০০ শিশু এবং ২৭৬ জন নারী রয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৬ হাজার ৬১২ জন ফিলিস্তিনি।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা লক্ষ্য করে ৬ হাজার বোমা ছোড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

টিএম