ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলি এলাকায় তাদের নজিরবিহীন আক্রমণ শুরু করেছিল বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এবং দরিদ্র অঞ্চল গাজা থেকে। এই উপত্যকায় সশস্ত্র সংঘাতের এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

এর মধ্যে বেশ কিছু সংঘাতের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে হয়েছে।

কয়েক দশক ধরে, ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। গাজা উপত্যকা ২০০৭ সাল থেকে শাসন করে আসছে হামাস। কিন্তু গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি এই যোদ্ধাদের হামলা সবাইকে হতবাক করে দিয়েছে।

হামাস ইসরায়েলে হাজার হাজার রকেট নিক্ষেপ করেছে। সেই সাথে অনেক হামাস যোদ্ধা গাজার সীমানা অতিক্রম করে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। এরপর তারা ইসরায়েলিদের ওপর হামলা চালায়, শত শত মানুষকে হত্যা করে এবং বহু সংখ্যক মানুষকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যায়।

এই হামলাকে গাজা থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের পরিচালিত এ যাবতকালের সবচেয়ে বড়, ভয়াবহ ও পরিকল্পিত আন্তঃসীমান্ত অভিযান বলে মনে করা হয়। প্রশ্ন হলো, এই গাজা উপত্যকার ইতিহাসে কী আছে? মানবাধিকার সংস্থা এবং ফিলিস্তিনিরা কেন একে বিশ্বের বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগার হিসাবে আখ্যা দিয়েছে?

ভোগ দখলের ভূখণ্ড

১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন এক মার্কিন প্রতিনিধিকে বলেছিলেন: ‘আমি চাই গাজা সমুদ্রে ডুবে যাক, কিন্তু তা হবে না, তাই আমাদের একটি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।’

আইজ্যাক রবিন ১৯৯৫ সালে এক ইহুদি চরমপন্থির হামলায় নিহত হন। তবে তিনি যে সমাধানের কথা বলেছিলেন, তিরিশ বছরের বেশি সময় পরেও, সেই সমাধানের কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। গাজা উপত্যকা ৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১০ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি অঞ্চল যা ইসরায়েল, মিশর এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যে অবস্থিত।

এখানে প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বসবাস করে। যা বিশ্বের সর্বোচ্চ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে একটি। গাজা উপত্যকাকে ঘিরে চার হাজার বছরের অবরোধ এবং ভোগ দখলের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

প্রাচীন মিশরীয় যুগ থেকে শুরু করে খ্রিস্টের কয়েকশ বছর আগে পর্যন্ত, এমনকি ১৬ শতকে অটোমান সাম্রাজ্যের পতন পর্যন্ত বিভিন্ন রাজবংশ, সাম্রাজ্য এবং ব্যক্তি এই গাজা উপত্যকাকে শাসন, ধ্বংস ও পুনরুদ্ধার করেছে।

আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, রোমান সাম্রাজ্য বা মুসলিম জেনারেল আমর ইবনে আল-আস এই গাজা উপত্যকা জয় করেছে। যখন যারা গাজা জয় করেছে তখন তারা তাদের মতো করে এখানকার ধর্মীয় বিশ্বাস, সমৃদ্ধি ও পতনকে প্রভাবিত করেছে।

গাজা ১৯১৭ সাল পর্যন্ত অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল, এরপর এটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে। ব্রিটেন মূলত একটি ঐক্যবদ্ধ আরব রাজ্য গঠনের জন্য কাজ করছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ ও তুর্কিরা গাজা উপত্যকা এবং অটোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত বেশিরভাগ এশিয়ান আরব অঞ্চলগুলোর ভবিষ্যতের বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছায়।

কিন্তু ১৯১৯ সালে প্যারিস শান্তি সম্মেলনের সময়, বিজয়ী ইউরোপীয় শক্তিগুলো প্রতিশ্রুত ঐক্যবদ্ধ স্বাধীন আরব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বাধা দেয়। বরং তারা বেশ কয়েকটি ম্যান্ডেট জারি করে যার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যকে বিভক্ত করে সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়।

এভাবে গাজা ফিলিস্তিনের ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত লীগ অব নেশনস এর অনুমোদন দেয়। গাজা উপত্যকা ১৯২০ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অংশ থাকে।

যুদ্ধ এবং অঞ্চল বণ্টন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, ব্রিটিশরা ফিলিস্তিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব সদ্য গঠিত জাতিসংঘের ওপর ছেড়ে দেয়। ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে দ্বিখণ্ডিত করা সংক্রান্ত ১৮১ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয়। যার মাধ্যমে, জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে দ্বিখণ্ডিত করার প্রস্তাব পাস করে। ইহুদিদের জন্য ভূখণ্ডের ৫৫ শতাংশ, গাজা উপত্যকাসহ বাকি অংশ আরবদের জন্য বরাদ্দ করা হয়।

তবে জেরুজালেম আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। এই প্রস্তাবনা ১৯৪৮ সালের মে মাসে কার্যকর হয়। যার ফলে, ফিলিস্তিনের ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অবসান ঘটে এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এরপরই যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। যা ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ নামে পরিচিতি পায়।

এই সংঘাতের কারণে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শরণার্থী গাজা উপত্যকায় বসতি স্থাপন করে। যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরের পর গাজা উপত্যকা মিশরের দখলে চলে যায় এবং তাদের হাতেই শাসিত হয়। তবে সেই নিয়ন্ত্রণ থাকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত। ওই বছর ইসরায়েলের সাথে মিশর, জর্ডান ও সিরিয়ার মধ্যে ছয় দিনের যুদ্ধ বেঁধে যায়।

সে সময় মিশর, সিরিয়া, জর্ডান এবং ইরাককে আনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র বা আরবদের জোট বলা হতো। যুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনী জয়লাভের পর গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়। এরপর থেকে ওই ভূখণ্ডের দখল নিয়ে একের পর এক সহিংস সংঘর্ষ শুরু হয় যা আজও অব্যাহত রয়েছে।

ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রথম ইন্তিফাদা বা অভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল গাজায় ১৯৮৭ সালে। সে বছর ইসলামপন্থি দল হামাস প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি অন্যান্য অধিকৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ১৯৯৩ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে অসলো চুক্তি স্বাক্ষর হয়। যার মাধ্যমে জন্ম হয় প্যালেস্টিনিয়ান ন্যাশনাল অথরিটি-পিএনএ বা ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের।

ওই চুক্তির মাধ্যমে গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরের কিছু অংশে সীমিত স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়া হয় যে ফিলিস্তিনিরা স্বশাসনের আংশিক অধিকার পাবে এবং ইসরায়েল প্রথমে পশ্চিম তীরের জেরিকো এবং তারপর গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে।

এর পরিবর্তে, ইসরায়েলি রাষ্ট্রের বৈধতা স্বীকার করে নেবে পিএলও। এরপর ২০০৫ সালে দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে সহিংস ইন্তিফাদার পর ইসরায়েল গাজা উপত্যকা থেকে তাদের সৈন্য এবং প্রায় সাত হাজার বসতি স্থাপনকারীদের প্রত্যাহার করে নেয়।

এর এক বছর পর, ফিলিস্তিনের নির্বাচনে হামাস নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। এরপর ২০০৭ সালে ফিলিস্তিনের হামাস এবং ফাতাহ পার্টির মধ্যে একটি সহিংস ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়। সে সময় ফাতাহ পার্টির নেতৃত্বে ছিলেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

সশস্ত্র গোষ্ঠীটি গাজায় বিজয়ী হয় এবং এখন পর্যন্ত তারাই সেখানকার শাসন ক্ষমতায় টিকে আছে। এর মধ্যে গাজা উপত্যকায় বয়ে গেছে তিনটি যুদ্ধ এবং ১৬ বছরের অবরোধ। হামাস ইসরায়েলকে ধ্বংস করে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এই সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হাজার হাজার রকেট হামলা এবং অন্যান্য মারাত্মক হামলা চালায়। সামগ্রিকভাবে হামাস বা কিছু ক্ষেত্রে এর সামরিক শাখাকে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসাবে চিহ্নিত করেছে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি অন্যান্য শক্তি।

তবে ইরান এই সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থন করে। সেইসাথে তাদের অর্থায়ন, অস্ত্র সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করে।

অবরোধ

হামাস ক্ষমতায় আসার পর ইসরায়েল ও মিশর গাজা উপত্যকার ওপর স্থল, আকাশ ও সমুদ্র অবরোধ আরোপ করে। জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থার আহ্বান সত্ত্বেও, ইসরায়েল ২০০৭ সাল থেকে অবরোধ অব্যাহত রেখেছে।

এই অবরোধ ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এক ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। গাজাবাসীদের স্বাভাবিক চলাচলের ক্ষেত্রেও কঠোর নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হয়। ইসরায়েলের মানবাধিকার গোষ্ঠী বিতসেলেমের মতে, গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ঢোকা ও বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইসরায়েল।

খুব বিরল ক্ষেত্রে তাদের চলাচল করতে দেওয়া হয়। যদি কারও জীবন সংকটে থাকে এবং জরুরী চিকিৎসা প্রয়োজন হয় এবং হাতে গোনা তালিকাভুক্ত কয়েকজন ব্যবসায়ী এই সুযোগ পান। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গাজার অবস্থাকে ‘একটি উন্মুক্ত কারাগার’ এর সাথে তুলনা করেছে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের ওপর চলাচলের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ইসরায়েল।

ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসের হাত থেকে ইসরায়েলি নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য তারা এই অবরোধের মাধ্যমে গাজার সীমানা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং মিশরও এই নিয়ন্ত্রণ আরোপে কাজ করছে। রেডক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি এই অবরোধকে বেআইনি এবং জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘন বলে মনে করে। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।

জাতিসংঘ, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং আইনজ্ঞরা মনে করেন যে গাজা এখনও ইসরায়েলের সামরিক দখলে রয়েছে। অবরোধ ঠেকানোর প্রচেষ্টা চালাতে গিয়ে, হামাস সুড়ঙ্গের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে।

এই সুড়ঙ্গ দিয়ে তারা গাজা উপত্যকায় পণ্য এবং অস্ত্র আনা-নেওয়া করে। সেইসাথে ভূগর্ভস্থ কমান্ড সেন্টার হিসাবে এই‌ টানেলগুলো ব্যবহার করে তারা। ইসরায়েল এই সুড়ঙ্গগুলোকে হুমকি হিসেবে দেখে এবং প্রায়ই সেগুলোকে বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত করে।

দরিদ্রতা

আমদানি এবং প্রায় সমস্ত রপ্তানি সীমিত করে ইসরায়েলের ১৬ বছরের অবরোধ গাজার অর্থনীতিকে পতনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, সেখানে বেকারত্বের হার ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

জাতিসংঘের মতে, গাজার ৬৫ শতাংশের বেশি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মতে, গাজার মোট জনসংখ্যার ৬৩ শতাংশ ‘খাদ্য অনিরাপদ’ অবস্থায় আছে। গাজায় বসবাসকারী অর্ধেক ফিলিস্তিনির বয়স ১৯ বছরের কম, কিন্তু তাদের আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধির সুযোগ খুবই সীমিত বা একেবারে নেই বললেই চলে।

এছাড়া বহির্বিশ্বের সাথে তাদের যোগাযোগের সুযোগও অনেক সীমিত।

জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ক্রমাগত সহিংসতার মধ্যে একটি প্রজন্ম বেড়ে উঠছে যেখানকার শিশুরা যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদী মানসিক প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে তেমন কোনও সহায়তা পায় না। যা গাজা উপত্যকায় বসবাসকারী শিশু কিশোরদের মধ্যে বিষণ্ণতাসহ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘গাজা বন্ধ করে দেওয়ার কারণে অনেক প্রতিভাবান, পেশাদার ব্যক্তিরা বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। যারা সুযোগ পেলে হয়তো সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারতো। ফিলিস্তিনিদেরকে মাতৃভূমি গাজায় অবাধে চলাফেরা করতে বাধা দেওয়ার কারণে তাদের জীবন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে লাখ লাখ ফিলিস্তিনির ওপর নিপীড়ন এবং তাদের ওপর বৈষম্যের নিষ্ঠুর বাস্তবতা ফুটে উঠেছে।’

২৩ লাখ ফিলিস্তিনি গাজার আনুমানিক ৩৬০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বসবাস করে। গাজা হলো ‘বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি,’ ইসরায়েলের বেসরকারি সংস্থা গিশা এই তথ্য জানিয়েছে।

জাতিসংঘের মতে, প্রায় ছয় লাখ শরণার্থী এই অঞ্চলের আটটি জনাকীর্ণ শিবিরে বাস করে। লন্ডনের মতো একটি শহরে গড়ে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় পাঁচ হাজার সাতশ জন, কিন্তু গাজা শহরে এই সংখ্যা নয় হাজারের বেশি।

২০১৪ সালে, ইসরায়েল রকেট হামলা এবং হামাস যোদ্ধাদের হামলা থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য সীমান্ত বরাবর একটি প্রতিরক্ষা অঞ্চল ঘোষণা করে। এ কারণে গাজা উপত্যকার একটি বড় অংশজুড়ে কোনও আবাসন নির্মাণ বা চাষাবাদের জন্য কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

গাজায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিত্যদিনের ঘটনা। জাতিসংঘের মানবিক সংগঠন ওসিএইচএ অনুসারে, গাজার বেশিরভাগ বাড়িতে দিনে মাত্র তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। গাজা উপত্যকা তাদের বেশিরভাগ বিদ্যুৎ ইসরায়েল থেকে পায়। পাশাপাশি গাজার একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এবং মিশর থেকে অল্প পরিমাণে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়।

বেশিরভাগ গাজাবাসী পানির ঘাটতিতেও ভুগছেন এবং একটি অনিশ্চিত জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে বসবাস করছে।

ফিলিস্তিনি অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্ব পালন করে এএনপি। ওসিএইচএ এর মতে, ইসরায়েল ও মিশরের অবরোধ, স্বাস্থ্যে এএনপির বিনিয়োগ কমে যাওয়া এবং এএনপি ও হামাসের মধ্যে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতি ভঙ্গুর করে তুলেছে।

জাতিসংঘ সেখানকার ২২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনায় সাহায্য করছে। তবে ইসরায়েলের সাথে পূর্ববর্তী সংঘর্ষে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তবে হামাসের সর্বশেষ হামলার পর গাজার বেসামরিক নাগরিকদের জীবন এবং অবকাঠামো পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে খারাপের দিকে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিবিসি বাংলা

টিএম