ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অবরোধ ও বোমাবর্ষণের তীব্র নিন্দা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। এমনকি গাজায় নির্বিচারে বোমা ফেলে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করাকে ‘গণহত্যা’ বলেও অভিহিত করেছেন তিনি।

বুধবার (১১ অক্টোবর) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অবরোধ ও বোমাবর্ষণের নিন্দা করে এটিকে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। বুধবার পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন একে পার্টির সদস্যদের সাথে কথা বলার সময় তিনি বলেন, এমনকি যুদ্ধেরও একটি ‘নৈতিকতা’ আছে কিন্তু চলমান সংঘাতে সেটি ‘খুব মারাত্মকভাবে’ লঙ্ঘন করা হয়েছে।

গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলি হামলায় গাজার অবকাঠামো ধ্বংস হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, ‘মানুষকে তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে বাধা দেওয়া এবং বেসামরিক লোকজনের বাসস্থানে বোমা হামলা করা কোনও যুদ্ধ নয়, এটি গণহত্যা।’

তুরস্কের এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা প্রকাশ্যে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে বেসামরিক হত্যার বিরোধিতা করছি। একইভাবে, আমরা কখনোই গাজায় নির্বিচারে, অবিরাম বোমা হামলার মাধ্যমে অরক্ষিত নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে গণহত্যা মেনে নিতে পারি না।’

মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতিস্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে গত শনিবার ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে সামরিক অভিযান শুরু করে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।

এরপর থেকে টানা ছয়দিনের এই সংঘাতে নিহত ইসরায়েলিদের সংখ্যা ১২০০ ছাড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে বহু সেনাসদস্য, নারী ও শিশু রয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও হাজার হাজার ইসরায়েলি।

জবাবে শনিবার থেকে গাজায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে কমপক্ষে ১২০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। গাজা ভূখণ্ডে ২৩ লাখ মানুষ বাস করেন এবং সেখানে খাদ্য ও জ্বালানি পৌঁছানোর পথ অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল।

যদিও গাজা ভূখণ্ডের অনেক মানুষ দরিদ্র এবং তারা সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া বুধবার গাজা প্রশাসন জানিয়েছে, ভূখণ্ডটির একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সেখানে আর বিদ্যুৎ পরিষেবা নেই।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের নিপীড়নমূলক নীতিই চলমান সংঘাতের কারণ। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, রাষ্ট্র হিসাবে কাজ না করে তারা কেবল একটি সংগঠনের মতো কাজ করলে তাদেরকে সেভাবেই দেখা হবে।’

আল জাজিরা বলছে, এরদোয়ান গাজায় ইসরায়েলের ‘অসমতুল্য’ আক্রমণকে ‘নৈতিক ভিত্তি বর্জিত’ বলে সমালোচনা করেছেন এবং বিশ্বকে ‘অন্ধভাবে’ একটি পক্ষ না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তুরস্কের এই প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেছেন, সংকটের অন্তর্নিহিত সমস্যাটিকে অমীমাংসিত রেখে নতুন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা উভয়পক্ষকে আরও সহিংস সংঘাতের দিকে নিয়ে যাবে।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, ‘আমরা আমেরিকা, ইউরোপ এবং অন্যান্য অঞ্চলের দেশগুলোকে সাম্য, ন্যায্য এবং মানবিক ভারসাম্যের ভিত্তিতে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাই। মানবিক সহায়তা অবরুদ্ধ করার মতো যেসব পদক্ষেপ ফিলিস্তিনি জনগণকে শাস্তির মুখে ঠেলে দিতে পারে এমন কাজ থেকে সকলের বিরত থাকা উচিত।’

কাতারভিত্তিক এই সংবাদমাধ্যম বলছে, তুরস্ক অতীতে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করেছে এবং হামাসের সদস্যদের আতিথেয়তা দিয়েছে। এছাড়া বছরের পর বছর ধরে চলে আসা শত্রুতার পর ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক সংশোধন করার জন্য কাজ করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো হামাসকে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন বলে মনে করে না তুরস্ক।

এছাড়া আঙ্কারা চলমান সংঘর্ষে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান নিজে এবং তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঞ্চলিক শক্তি, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।

টিএম