হামাসের ছোড়া রকেট প্রতিহত করছে ইসরায়েলের আয়রন ডোম

দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সামরিক হামলা চালাচ্ছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। গত শনিবার (৭ অক্টোবর) হামাসের প্রায় এক হাজার যোদ্ধা গাজা থেকে ইসরায়েলের ভেতর প্রবেশ করেন। এরপর শুরু করেন তাদের অভিযান।

তবে যে সরু গাজা উপত্যকা থেকে হামাস ইসরায়েলে প্রবেশ করেছে— সেই গাজা দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে। সেখানকার প্রায় ২০ লাখ মানুষকে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আবদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। আর ইসরায়েলের এ অবরোধের কারণে সেখানকার মানুষ ঠিকমতো তিন বেলা খেতেও পান না। তাদের বেশিরভাগই দারিদ্র সীমার নিচে বাস করেন।

গাজা থেকে বের হতে বা প্রবেশ করতে হলে গাজাবাসীকে  ইসরায়েলের অনুমতি নিতে হয়। তারা অনুমতি নিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করলেও ব্যাপক তল্লাশির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।

কিন্তু কঠোর অবরোধ সত্ত্বেও সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস নিজেদের সেখানে বেশ শক্তিশালীভাবে সংঘটিত করেছে এবং ইসরায়েলের মতো শক্তিশালী সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় অভিযান চালাচ্ছে।

ইসরায়েলের ভেতর অভিযান চালাতে হামাস এত রকেট ও আধুনিক অস্ত্র কীভাবে পেয়েছে— এখন সে বিষয়টি নিয়েই চলছে আলোচনা।

নিহত এক যোদ্ধার জানাযায় উপস্থিত হয়েছেন হামাসের অস্ত্রধারী সদস্যরা

২০০৫ সালের আগে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের উপস্থিতি ছিল। সে বছর তৎকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গাজা থেকে সব ইসরায়েলি সেনাকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর ২০০৭ সালে রাজনৈতিক ও সশস্ত্র দল হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়।

তবে হামাস যেন নিজেদের সংঘঠিত করতে না পারে সেজন্য গাজায় অস্ত্র প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি অবস্থান বজায় রাখে ইসরায়েল। এছাড়া সাধারণ মানুষের চলাচলেও রাখা হয় কঠোর নজরদারি। কিন্তু তারপরেও স্থল ও নৌপথে প্রচুর অস্ত্র সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছে হামাস।

কীভাবে এত অস্ত্র পেলো তারা?

গাজার এক পাশে হলো ভূমধ্যসাগর, দুই পাশে হলো ইসরায়েল আর একপাশে মিসর। ইসরায়েলের ভেতর দিয়ে হামাস কোনো অস্ত্র আনতে পারে না। তাদের অস্ত্র আসে মূলত ভূমধ্যসাগর ও মিসর হয়ে।

অস্ত্র চোরাকারবারীরা ভূমধ্যসাগরের উপকূলে অস্ত্র ফেলে। এরপর সেগুলো কৌশলে হামাসের কাছে আসে। যদিও ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অস্ত্র হামাসের কাছে ঠিকই চলে আসে।

হামাসের অস্ত্র পাওয়ার আরেকটি বড় রুট হলো মিসর। গাজা থেকে মিসরে হামাসের অনেক গোপন সুড়ঙ্গ (টানেল) আছে। আর এসব সুড়ঙ্গ দিয়ে ইরান ও সিরিয়া থেকে ফজর-৩, ফজর-৫ এবং এম-৩০২ রকেট ঢোকে গাজায়।

ফজর-৩ ইরানের তৈরি একটি সারফেস টু সারফেস রকেট। এটি ৪৩ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এই রকেট লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর কাছেও আছে। ফজর-৫ রকেট ৯৫ কেজি বিস্ফোরক নিয়ে ৭৫ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারে।

এছাড়া এম-৩০২ রকেটও ইরানের তৈরি। দূরপাল্লার এই রকেটটি হামাসকে পাঠায় হিজবুল্লাহ।

তালেবানের সংশ্লিষ্টতা

বেশ কয়েকটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের হামাস যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করছে। যেগুলো মার্কিন সেনারা ২০২১ সালে আফগানিস্তানে ফেলে পালিয়েছিল। সেসব অস্ত্র তালেবান পরবর্তীতে জব্দ করে। আর ওই অস্ত্রগুলোর কিছু তারা হামাসকে দিয়েছে।

এদিকে শনিবার যখন হামাস প্রথম হামলা চালায় তার ঠিক আগে একসঙ্গে তারা ইসরায়েলে ৫ হাজার রকেট ছোড়ে। ওই রকেটের বেশিরভাগই ইরানে তৈরি করা হয়েছে।

এমটিআই