ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাস যোদ্ধারা প্রবেশ করার পর ইসরায়েল-গাজা সীমান্ত বেড়া ভেঙে ইসরায়েলে প্রবেশ করছেন ফিলিস্তিনিরা। শনিবারের ছবি

ফিলিস্তিনের গাজাভিত্তিক স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলায় কমপক্ষে ২৬ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। শনিবার (৭ অক্টোবর) সকাল থেকে চালানো হামলায় তারা প্রাণ হারান।

এছাড়া হামাসের এই হামলায় নিহত ইসরায়েলিদের মোট সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩০০। এছাড়া অনেক ইসরায়েলি সেনাসদস্যকে আটকও করেছে স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীটি। রোববার (৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের নজিরবিহীন হামলায় ইসরায়েলের অন্তত ২৬ সেনা নিহত হয়েছে বলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের ওয়েবসাইটে নিহত সৈন্যদের নাম প্রকাশ করেছে এবং তাদের পরিবারকে জানানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে হামাসের একজন সিনিয়র নেতা বলেছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন হামলার সময় বহু ইসরায়েলি সৈন্যকে আটক করেছে তারা। আর সেটি ইসরায়েলি কারাগারে থাকা সমস্ত ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্ত করার জন্য যথেষ্ট।

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর ডেপুটি চিফ সালেহ আল-আরৌরি শনিবার আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘আমরা অনেক ইসরায়েলি সৈন্যকে হত্যা ও বন্দি করতে পেরেছি। লড়াই এখনও চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের কারাগারে আটক থাকা আমাদের বন্দিদের মুক্ত হওয়ার সময় এগিয়ে আসছে। আমাদের হাতে যা আছে তার মাধ্যমে আমাদের সকল বন্দিকে তারা মুক্তি দেবে। লড়াই যত দীর্ঘ হবে, বন্দিদের সংখ্যাও তত বেশি হবে।’

আল-আরৌরি বলেছেন, হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলি বন্দিদের মধ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীর সিনিয়র অফিসাররাও রয়েছেন। কিন্তু তাদের সংখ্যা ঠিক কত তা সম্পর্কে কোনও পরিসংখ্যান তিনি দেননি।

অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও স্বীকার করেছে যে, হামাসের হামলায় তাদের সৈন্য ও কমান্ডাররা নিহত হয়েছে এবং অনেককে যুদ্ধবন্দি হিসেবে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে ঠিক কতজন সেনাকে হামাস বন্দি করে নিয়ে গেছে তার কোনও পরিসংখ্যান দেয়নি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।

এর আগে শনিবার আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সালেহ আল-আরৌরি বলেন, ‘এটা (হামলা-পাল্টা হামলা) কোনও অভিযান নয়; আমরা সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করেছি। আমরা আশা করছি, যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে এবং লড়াইয়ের পরিধি প্রসারিত হবে। আমাদের একটি প্রধান লক্ষ্য আছে, তা হলো আমাদের স্বাধীনতা এবং আমাদের পবিত্র স্থানগুলোর স্বাধীনতা।’

তিনি বলেন, স্বাধীনতা, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং তাদের পবিত্র স্থানগুলোকে রক্ষার অধিকার রয়েছে ফিলিস্তিনিদের। সালেহ আল-আরৌরি বলেন, ‘আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত বিজয়, স্বাধীনতার স্বাদ না পাব, ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাব।’

তিনি বলেন, চলমান এই যুদ্ধের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্যও আমরা প্রস্তুত আছি। হামাসের এই উপপ্রধান বলেন, এখন সব পরিস্থিতিই সম্ভব। আমরা একটি (ইসরায়েলি) স্থল আক্রমণের জন্যও প্রস্তুত রয়েছি। ইসরায়েল বর্তমানে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

এর আগে ইসরায়েলিদের তৈরি অবৈধ বসতিগুলো লক্ষ্য করে আকস্মিক ও অতর্কিত হামলা শুরু করে ফিলিস্তিনের গাজাভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। শনিবার সকাল থেকে চালানো এই হামলায় নিহত ইসরায়েলিদের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩০০।

এছাড়া অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা পরিচালনাকারী গোষ্ঠী হামাসের ভয়াবহ এই হামলায় আহত হয়েছে আরও প্রায় ১৬০০ ইসরায়েলি। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। আর তাই  মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

টিএম