ইসরায়েলের অ্যাশকেলনে হামাসের রকেট হামলার পর গাড়িতে আগুন জ্বলছে। পাশেই দৌড়ে পালাচ্ছেন এক ব্যক্তি। শনিবারের ছবি

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনের গাজাভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। শনিবার (৭ অক্টোবর) সকাল থেকে চালানো এই হামলায় নিহত ইসরায়েলিদের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩০০। এছাড়া অনেক ইসরায়েলি সেনাসদস্যকে আটকও করেছে গোষ্ঠীটি।

এমনকি ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্ত করার জন্য হামাসের কাছে যথেষ্ট ইসরায়েলি বন্দি আটক রয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। শনিবার রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

হামাসের একজন সিনিয়র নেতা বলেছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন হামলার সময় বহু ইসরায়েলি সৈন্যকে আটক করেছে তারা। আর সেটি ইসরায়েলি কারাগারে থাকা সব ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্ত করার জন্য যথেষ্ট।

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর ডেপুটি চিফ সালেহ আল-আরৌরি শনিবার আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘আমরা অনেক ইসরায়েলি সৈন্যকে হত্যা ও বন্দি করতে পেরেছি। লড়াই এখনও চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের কারাগারে আটক থাকা আমাদের বন্দিদের মুক্ত হওয়ার সময় এগিয়ে আসছে। আমাদের হাতে যা আছে তার মাধ্যমে আমাদের সকল বন্দিকে তারা মুক্তি দেবে। লড়াই যত দীর্ঘ হবে, বন্দিদের সংখ্যাও তত বেশি হবে।’

আল-আরৌরি বলেছেন, হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলি বন্দিদের মধ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীর সিনিয়র অফিসাররাও রয়েছেন। কিন্তু তাদের সংখ্যা ঠিক কত তা সম্পর্কে কোনও পরিসংখ্যান তিনি দেননি।

অবশ্য বন্দিদের অধিকার নিয়ে কাজ করা এনজিও অ্যাডামিরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রায় ৫ হাজার ২০০ জন ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের কারাগারে বর্তমানে বন্দি রয়েছে। যার মধ্যে ৩৩ জন নারী, ১৭০ জন নাবালক। এছাড়া ১২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে প্রশাসনিকভাবে বন্দি রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও স্বীকার করেছে যে, হামাসের হামলায় তাদের সৈন্য ও কমান্ডাররা নিহত হয়েছে এবং অনেককে যুদ্ধবন্দি হিসেবে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে ঠিক কতজন সেনা নিহত হয়েছে বা হামাস কতজনকে বন্দি করে নিয়ে গেছে তার কোনও পরিসংখ্যান দেয়নি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।

শনিবার আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সালেহ আল-আরৌরি বলেন, ‘এটা (হামলা-পাল্টা হামলা) কোনও অভিযান নয়; আমরা সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করেছি। আমরা আশা করছি, যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে এবং লড়াইয়ের পরিধি প্রসারিত হবে। আমাদের একটি প্রধান লক্ষ্য আছে, তা হলো আমাদের স্বাধীনতা এবং আমাদের পবিত্র স্থানগুলোর স্বাধীনতা।’

তিনি বলেন, স্বাধীনতা, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং তাদের পবিত্র স্থানগুলোকে রক্ষার অধিকার রয়েছে ফিলিস্তিনিদের। সালেহ আল-আরৌরি বলেন, ‘আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত বিজয়, স্বাধীনতার স্বাদ না পাব, ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাব।’

তিনি বলেন, চলমান এই যুদ্ধের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্যও আমরা প্রস্তুত আছি। হামাসের এই উপপ্রধান বলেন, এখন সব পরিস্থিতিই সম্ভব। আমরা একটি (ইসরায়েলি) স্থল আক্রমণের জন্যও প্রস্তুত রয়েছি। ইসরায়েল বর্তমানে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

এর আগে ইসরায়েলিদের তৈরি অবৈধ বসতিগুলো লক্ষ্য করে আকস্মিক ও অতর্কিত হামলা শুরু করে ফিলিস্তিনের গাজাভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। শনিবার সকাল থেকে চালানো এই হামলায় নিহত ইসরায়েলিদের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩০০।

এছাড়া অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা পরিচালনাকারী গোষ্ঠী হামাসের ভয়াবহ এই হামলায় আহত হয়েছে আরও প্রায় ১৬০০ ইসরায়েলি। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। আর তাই  মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে হামাসের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো ইসরায়েলি বন্দিদের গাজা উপত্যকায় জীবিত অবস্থায় ধরে আনার বহু ভিডিও ফুটেজ পোস্ট করেছে। হামাস বলেছে, আটক ইসরায়েলিদের সংখ্যা ইসরায়েল যা জানে তার চেয়েও অনেক বেশি।

এদিকে ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, হামলার পর আহতদের চাপ বেড়েছে দক্ষিণ ইসরায়েল ও গাজার সবগুলো হাসপাতালে। তাই এসব হাসপাতালে একটি বেডও ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না।

অন্যদিকে পৃথক এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৬৯৭ জন।

টিএম