ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর প্রস্তুতি হিসেবে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।

এছাড়া হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩০০। এই পরিস্থিতিতে প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েল গাজায় আরও শক্তিশালী বিমান হামলা চালাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রোববার (৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর প্রস্তুতি হিসেবে গাজা উপত্যকাজুড়ে সাতটি ভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িঘর ছেড়ে শহরের কেন্দ্রে চলে যেতে বা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বলেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে বলেছেন, গাজা ভূখণ্ডের কয়েক ডজন পরিবার তাদের বাড়িঘর ছেড়ে জাতিসংঘের স্কুলে আশ্রয় নিচ্ছে।

অন্যদিকে গাজার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র আরবি ভাষায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বলে পৃথক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, শনিবার সকাল থেকে ইসরায়েলে সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিকদের হামাসের প্রাণঘাতী ও বহুমুখী আক্রমণে ঘটনায় ইসরায়েলের চলমান পাল্টা হামলার মধ্যেই গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য আইডিএফ-এর মুখপাত্র আরবিতে বার্তা দিয়েছেন।

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে আইডিএফ-এর আরবি-ভাষার মুখপাত্র আভিচায় আদ্রাই গাজার বাসিন্দাদের বলেন, ‘(ইসরায়েলি ভূখণ্ডে) হামাসের সামরিক অভিযান ইসরায়েলি বাহিনীকে আপনার আবাসস্থলে অভিযান চালাতে বাধ্য করছে। আর তাই নিরাপত্তার জন্য আপনাদের অবিলম্বে আপনার বাসস্থান ত্যাগ করতে হবে।’

এদিকে ইসরায়েলের ইসডেরট শহরের মেয়র ‘নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যার’ নিন্দা করে হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। টাইমস অব ইসরায়েল বলছে, মেয়র অ্যালন ডেভিডি তার শহরের বাসিন্দাদের বাড়ির ভেতরেই অবস্থান করতে বলেছেন এবং নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত বাইরে আসতেই নিষেধ করেছেন। 

এর আগে ইসরায়েলিদের তৈরি অবৈধ বসতিগুলো লক্ষ্য করে আকস্মিক ও অতর্কিত হামলা শুরু করে ফিলিস্তিনের গাজাভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। শনিবার সকাল থেকে চালানো এই হামলায় নিহত ইসরায়েলিদের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩০০।

এছাড়া হামাসের ভয়াবহ এই হামলায় আহত হয়েছে আরও প্রায় ১৬০০ ইসরায়েলি। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। আর তাই  মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এছাড়া কয়েক ডজন বেসামরিক নাগরিক এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) সৈন্যদের আটক করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন এই গোষ্ঠীটি গর্ব করে বলেছে, আটক ইসরায়েলিদের সংখ্যা ইসরায়েল যা জানে তার চেয়েও অনেক বেশি।

এদিকে ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, হামলার পর আহতদের চাপ বেড়েছে দক্ষিণ ইসরায়েল ও গাজার সবগুলো হাসপাতালে। তাই এসব হাসপাতালে একটি বেডও ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না।

অন্যদিকে পৃথক এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৬৯৭ জন।

টিএম