যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ অঞ্চলের একটি গ্রামের মুদিদোকান ও ক্যাফেতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৫১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ অঞ্চলের একটি গ্রামের মুদিদোকান ও ক্যাফেতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৫১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলায় প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটেছে বলে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আঞ্চলিক গভর্নর ওলেহ সিনহুবভ বলেছেন, বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে খারকিভ অঞ্চলের কুপিয়ানস্ক জেলার হরোজা গ্রামের ক্যাফে এবং মুদিদোকানে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ক্যাফে ও দোকান। হামলার সময় অনেক বেসামরিক মানুষ সেখানে ছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

দেশটির কর্মকর্তারা স্তম্ভিত চেহারার উদ্ধারকর্মীদের ভিডিও ফুটেজ পোস্ট করেছেন; যারা ধোঁয়া ওঠা ধ্বংসস্তুপের মাঝে ঘোরাফেরা করছেন। কিছু ছবিতে কংক্রিট এবং ধাতব স্ল্যাবের ওপর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এ সময় উদ্ধারকর্মীদের ধ্বংসস্তূপ থেকে কিছু মৃতদেহ সরিয়ে নিয়ে যেতেও দেখা যায়।

ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহোর ক্লাইমেনকো বলেছেন, প্রায় ৩৩০ জন বাসিন্দার গ্রামটির অনেকে হামলার সময় ক্যাফেতে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। ওই সময় তারা ক্যাফেতে বসে খাবার খাচ্ছিলেন। হামলায় ওই ক্যাফে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বলে সেখানকার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

দেশটির একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি পরিবার থেকে, প্রতিটি বাড়ি থেকে লোকজন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এটি ভয়ানক এক ট্র্যাজেডি।

ইউক্রেনের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম সাসপিলনেকে খারকিভের আঞ্চলিক প্রশাসনের একজন সামরিক মুখপাত্র বলেছেন, ১৯ মাসেরও বেশি সময় আগে রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে খারকিভ অঞ্চলে আজকের হামলা ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়ার একক কোনও হামলায় এটিই সবচেয়ে বেশি বেসামরিকের প্রাণ কেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রাথমিক তথ্য-উপাত্তের বরাত দিয়ে ক্লাইমেনকো বলেছেন, ইস্কান্দার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে খারকিভে এই হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। বেসামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানোর পরিষ্কার আলামত পাওয়া গেছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো খারকিভে হামলার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তম উমেরভ বলেছেন, ‘সন্ত্রাসীরা ইচ্ছাকৃতভাবে মধ্যাহ্নভোজের সময় হামলা চালিয়েছে, যাতে সর্বোচ্চসংখ্যক হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়। হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে কোনও সামরিক লক্ষ্যবস্তু ছিল না। এটি জঘন্য এক অপরাধ; যা ইউক্রেনীয়দের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।

স্পেনে ইউরোপীয় নেতাদের সাথে শীর্ষ এক সম্মেলনে অংশ নেওয়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করা উচিত। তিনি বলে, এখন আমরা ইউরোপীয় নেতাদের সাথে আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার, বিশেষ করে আমাদের সৈন্যদের শক্তিশালী করা এবং দেশকে সন্ত্রাস থেকে রক্ষা করার বিষয়ে কথা বলছি।

তবে খারকিভের হরোজা গ্রামের ক্যাফে এবং মুদিদোকানে হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মস্কোর কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস