ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর

কানাডার নাগরিক এবং সেখানে বসবাসকারী শিখ ধর্মাবলম্বীদের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ড নিয়ে অবশেষে কানাডার কাছে গোয়েন্দা তথ্য চেয়েছে ভারত। দেশটির কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, একমাত্র সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলেই তার দেশের পক্ষে কানাডাকে সহযোগিতা করা সম্ভব।

মঙ্গলবার নিউইয়র্কে অলাভজনক মার্কিন থিঙ্কট্যাংক সংস্থা কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন জয়শঙ্কর। সেখানে কানাডার সরকারের হরদীপ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন তিনি।

তবে নিজ বক্তব্যে কানাডার সরকারের কঠোর সমালোচনাও করেছেন জয়শঙ্কর। নিজ বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে কানাডায় ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো রীতিমতো দৌরাত্ম্য চালাচ্ছে। আমাদের দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতে তারা হামলা চালাচ্ছে, আমাদের দূতাবাস কর্মকর্তাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে। এমনকি কানাডায় বসে ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী তৎপরতা পরিচালনা করছে— এমন রেকর্ডও রয়েছে।’

‘কানাডা এসব সন্ত্রাসী-বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সহিংস কর্মকাণ্ডে যুক্ত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কয়েক জনকে আমরা চিহ্নিত করেছি, ভারতে প্রত্যার্পণ করার জন্য কানাডার সরকারের কাছে কয়েকবার অনুরোধ করে চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু কানাডা সেই অনুরোধে সাড়া দেয়নি।’

তবে হরদীপ ‍হত্যা ইস্যুতে কানাডা যদি ভারতে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রদান করে, সেক্ষেত্রে ভারত এই তদন্তে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন জয়শঙ্কর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রথমেই বলছি—এভাবে কাউকে হত্যা করা ভারতের নীতির মধ্যে পড়ে না। তারপরও যেহেতু তারা অভিযোগ তুলেছে, এক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য হলো এই অভিযোগ সম্পর্কে আমাদের সুনির্দিষ্ট তথ্য দেওয়া হোক।’

‘কানাডার সরকার যদি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত গোয়েন্দা তথ্য দেয়, সেক্ষেত্রে তা যাচাই ও তদন্তের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো বাধা নেই।’

ভারতের পরই যে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিখ বসবাস করেন, তার নাম কানাডা। দেশটির ২০২১ সালের জনশুমারির তথ্য বলছে, প্রায় ৮ লাখ শিখ ধর্মাবলম্বী বসবাস করেন কানডায়।

হরদীপ সিং নিজ্জর ছিলেন কানাডার বসবাসকারী শিখদের একজন নেতা । ১৯৭৭ সালে তিনি ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধর জেলা থেকে দেশটিতে গিয়েছিলেন, পরে সেখানাকার নারিকত্বও অর্জন করেন তিনি।

এদিকে ভারতের একজন তালিকাভুক্ত ‘ফেরার’ সন্ত্রাসীও ছিলেন হরদীপ। ভারতের অন্যতম বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন খালিস্তানি টাইগার ফোর্স এবং ‘শিখস ফর জাস্টিস’ কানাডা শাখার নেতা ছিলেন তিনি। দু’টি সংগঠনই ভারতে নিষিদ্ধ। হরদীপকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করাতে আগ্রহী ছিল ভারত।

গত ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের ভ্যানকুভার শহরের একটি গুরুদুয়ারার (শিখ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়) কাছে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন হরদীপ সিং নিজ্জর

এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সম্প্রতি ভারতকে সরাসরি দায়ী করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ১৮ সেপ্টেম্বর  সোমবার কানাডার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে ট্রুডো বলেন, তার দেশের গোয়েন্দারা হরদীপ হত্যায় ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছেন।

কানাডার জন্য এই ঘটনাটি যে তীব্র অবমাননাকর, তা বোঝাতে গিয়ে পার্লামেন্ট ভাষণে ট্রুডো বলেন, ‘কানাডার মাটিতে একজন কানাডীয় নাগরিককে হত্যার সঙ্গে বিদেশি সরকারের জড়িত থাকার বিষয়টি আমাদের সার্বভৌমত্বের অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন।’

ভারতের সরকারের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীন, মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা যেভাবে কাজ করে, এই ঘটনা (হরদীপ হত্যা) সেই মৌলিক নিয়মনীতির পরিপন্থী।’

ট্রুডো পার্লামেন্টে এই অভিযোগ তোলার পরদিনই কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিসি উইং (র) কানাডা শাখার প্রধানকে বহিষ্কারাদেশ দেয় কানাডীয় সরকার।

এদিকে ট্রুডোর এই বক্তব্যের পর থেকে নজিরবিহীন টানাপোড়েনে জড়িয়ে পড়েছে কানাডা ও ভারত।ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে, সেই সঙ্গে ট্রুডোর বক্তব্য এবং ভারতীয় শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে বহিষ্কারের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষুব্ধও হয়েছে দেশটি। ‘র’ কানাডীয় শাখার প্রধানকে বহিষ্কারাদেশ দেওয়ার পরের দিনই পাল্টা ব্যবস্থা ভারতের কানাডার দূতাবাসের একজন জেষ্ঠ্য কূটনীতিকে ভারত ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে নয়াদিল্লি।

সূত্র : আলজাজিরা

এসএমডব্লিউ