নজরদারি চালাচ্ছেন এক সেনা -ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি নিজ অঞ্চল নাগোরনো-কারাবাখে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আর্মেনীয়দের বিরুদ্ধে বড় সামরিক অভিযান চালাচ্ছে আজারবাইজান। দেশটি জানিয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত এই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আত্মসমর্পণ করবে না— ততক্ষণ সেখানে তাদের ‘সন্ত্রাসী বিরোধী’ অভিযান চলবে।

নাগোরনো-কারাবাখ নিয়ে ককেশীয় অঞ্চলের দুই দেশ আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। ১৯৯০ সালের দিকে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায় তখন এই ছিটমহল নিয়ে দুই দেশ যুদ্ধে জড়িয়েছিল। এরপর ২০২০ সালে আবার তাদের মধ্যে ছয় সপ্তাহব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল।

নাগোরনো-কারাবাখ আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হলেও এখানে মূলত জাতিগত আর্মেনীয়দের বসবাস। তারা আজারবাইজানের শাসন মানতে চায় না। নিজ দেশ আজারবাইজানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক না গড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ আর্মেনিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে থাকে এই ছিটমহলটির স্থানীয় সরকার।

কালো চিহ্নিত দেশ হলো আর্মেনিয়া, লাল চিহ্নিত অঞ্চল হলো নাগোরনো-কারাবাখ। আর কমলা চিহ্নিত অঞ্চল হলো আজারবাইজান। পাহাড়ি অঞ্চল নাগোরনো-কারাবাখ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। এটি আজারবাইজানের অংশ হলেও সেখানে বাস করেন জাতিগত আর্মেনিয়রা। তারা আজারবাইজান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা রাষ্ট্র অথবা আর্মেনিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে চায়। -ছবি সূত্র: আল জাজিরা

আরেকটি বড় বিষয় হলো জাতিগত আর্মেনীয়রা খ্রিষ্টধর্ম পালন করে থাকেন। অপরদিকে আজারবাইজান হলো মুসলিম প্রধান দেশ। তাদের মধ্যে ধর্মগত দিক দিয়ে পার্থক্য থাকার বিষয়টিও এসব দ্বন্দ্বের অন্যতম বড় কারণ।

২০২০ সালে যখন যুদ্ধ বাঁধে তখন নাগোরনো-কারাবাখের বেশিরভাগ অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে আজারবাইজান। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে আবার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে। এরপরই সেখানে সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাকু।

তারা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আত্মসমর্পণ ও অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দিয়ে বলেছে, ‘আর্মেনিয়ান অবৈধ সামরিক সংগঠনকে’ অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে এবং তাদের ‘অবৈধ শাসনের’ বিলুপ্তি ঘটাতে হবে।

আরও পড়ুন>>> নাগোরনো-কারাবাখে আজারবাইজানের হামলায় নিহত ২৫

মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সামরিক অভিযান শুরুর পর যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আলোচনা শুরুর আহ্বান জানায় জাতিগত আর্মেনীয়রা। তবে আজারবাইজানের বেঁধে দেওয়া আল্টিমেটাম থেকে বোঝা গেছে, এই ছিটমহলে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা পর্যন্ত তারা থামবে না।

এদিকে নাগোরনো-কারাবাখে আজারবাইজানে সামরিক অভিযান শুরুর পর আর্মেনিয়ার সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ করেন। তারা দেশটির সংসদে হামলা চালানোর চেষ্টা করেন এবং সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন। সাধারণ আর্মেনীয়রা জানান, নাগোরনো-কারাবাখে জাতিগত আর্মেনীয়;রে ওপর হামলা চালালেও আর্মেনিয়া কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

তবে আজারবাইজান জানিয়েছে নাগোরনো-কারাবাখের রাজধানী খানকেন্দি থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরের শহর ইয়েভলাখে তারা আলোচনা শুরু করতে পারে।

এদিকে ২০২০ সালে যখন আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধে তখন সেখানে হস্তক্ষেপ করে রাশিয়া। দুই দেশকে শান্ত রাখতে ওই ছিটমহলে নিজেদের তিন হাজার সেনা মোতায়েন করে মস্কো। তবে গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে সেখান থেকে রাশিয়ার নজর অনেকটাই সরে যায়।

সূত্র: বিবিসি

এমটিআই