রাশিয়ান হানাদারদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আবেদন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে তিনি এই আবেদন করেন।

এছাড়া তার এই আবেদন মার্কিন কংগ্রেসের রিপাবলিকানরাও লক্ষ্য করবেন বলে আশাপ্রকাশ করেছেন বাইডেন। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে অংশ নিয়ে ভাষণ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া বিশ্বাস করে, বিশ্ব ক্লান্ত হয়ে উঠবে এবং কোনও ধরনের ফলাফল ছাড়াই ইউক্রেনে নৃশংসতা চালানোর সুযোগ দেবে। যদি আমরা ইউক্রেনকে ধ্বংস করতে দেই, তাহলে কি কোনও দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকবে?’

বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলো স্বাধীনতার লড়াইয়ে ইউক্রেনের পাশে থাকবে। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া একাই এই যুদ্ধের জন্য দায়ী। এই যুদ্ধ অবিলম্বে শেষ করার ক্ষমতাও আছে একমাত্র রাশিয়ার কাছে।’

রয়টার্স বলছে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে অংশ নিতে জো বাইডেন তিন দিনের জন্য নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন এবং এই অধিবেশনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশের প্রধান এবং ইসরায়েল ও ব্রাজিলের নেতাদের সাথে বৈঠকও করবেন।

এছাড়া প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য মার্কিন মিত্রদের ঐক্যবদ্ধ করছেন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম প্রধান একটি যুক্তি দিয়ে। আর সেটি হলো- বিশ্বকে অবশ্যই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে স্পষ্ট সংকেত পাঠাতে হবে যে, তিনি পশ্চিমকে ছাড়িয়ে যেতে পারবেন না।

অবশ্য বাইডেন কিছু রিপাবলিকানদের সমালোচনার মুখোমুখিও হয়েছেন। বিরোধী এসব রিপাবলিকানরা চান, ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কম অর্থ ব্যয় করুক। এমনকি সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ক্ষমতায় ফিরে এলে যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তি নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছেন।

মূলত অগণিত আইনি সমস্যা থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক জনমত জরিপে নিজ দলের অন্যান্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। যদিও ট্রাম্প অতীতে সামরিক জোট ন্যাটোসহ ঐতিহ্যবাহী মার্কিন মিত্রদের সাথে ওয়াশিংটনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন এবং অন্যদিকে পুতিনের প্রশংসা করেছেন।

এছাড়া ওয়াশিংটনের নেতৃস্থানীয় রিপাবলিকান নেতা এবং মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থিও প্রশ্ন তুলেছেন, রুশ আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেরণ করা উচিত কিনা।

তবে সকিছু ছাপিয়ে মঙ্গলবারের বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, রাশিয়ার ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণ এবং দেশটির কিছু অঞ্চল দখল করে নিজ ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়টি জাতিসংঘের সনদ লঙ্ঘন করেছে।

মূলত জাতিসংঘ সনদের প্রধান একটি নীতি হলো- সকল দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা।

উল্লেখ্য, টানা দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ এই আগ্রাসনের শুরু থেকেই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিকে অস্ত্রসহ সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো।

অপরদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে সহায়তা না করতে চীনসহ প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিপক্ষ দেশগুলোকে সতর্ক করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও ইউক্রেনকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র দেওয়া নিয়ে বিরোধী রিপাবলিকানদের প্রশ্নের মুখে পড়েছে বাইডেন প্রশাসন।

টিএম