রাশিয়ান দুর্বৃত্ত বা মন্দ শক্তিকে বিশ্বাস করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এছাড়া রাশিয়া তার দেশে যুদ্ধাপরাধ করছে এবং রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র রাখার কোনও অধিকারই নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন। এছাড়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ আগ্রাসন বন্ধ করতে বিশ্বকে একত্রিত হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন জেলেনস্কি।

বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে অংশ নিয়ে আবেগঘন বক্তৃতা দেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। সেখানে তিনি বলেন,  ‘বিশ্বকে চূড়ান্ত যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া’ থেকে পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত মস্কোকে অবশ্যই রুখে দিতে হবে।

এসময় তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে খাদ্য থেকে জ্বালানি সব কিছুকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগও করেন।

অবশ্য ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক আগ্রাসন বিশ্বজুড়ে ব্যাপক নিন্দার জন্ম দিয়েছে। রাশিয়ার এই আগ্রাসন বিশ্বে যে বিপদ ডেকে আনছে তার ওপর গভীরভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এদিনের বক্তৃতায় জেলেনস্কি যুক্তি দেন, মস্কোকে পরাজিত করার পরই কেবল জলবায়ু পরিবর্তনের মতো অন্যান্য অভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলো সঠিকভাবে মোকাবিলা করা যেতে পারে।

জাতিসংঘের বার্ষিক সাধারণ পরিষদে যোগদানকারী বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়া যখন বিশ্বকে চূড়ান্ত যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, ইউক্রেন তখন এটাই নিশ্চিত করার জন্য সবকিছু করছে যে, রাশিয়ার আগ্রাসনের পর বিশ্বের কেউ অন্য কোনও দেশকে আক্রমণ করার সাহস করবে না।’

তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার ‘পরমাণু অস্ত্র রাখার অধিকার নেই’। জেলেনস্কির ভাষায়, ‘সবকিছুর অস্ত্রীকরণ বা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার অবশ্যই রোধ করতে হবে, যুদ্ধাপরাধের অবশ্যই শাস্তি হতে হবে, নির্বাসিত ব্যক্তিদের অবশ্যই দেশে ফিরে আসতে দিতে হবে এবং দখলদারকে অবশ্যই তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে হবে।’

ইউক্রেনীয় এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটি করতে আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এবং আমরা এটি করব!’

তিনি ইউক্রেনীয় শিশুদের অপহরণ করে ‘গণহত্যা’ চালানোর জন্য মস্কোকেও অভিযুক্ত করেন। চলতি বছরের মার্চ মাসে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি) ইউক্রেনীয় শিশুদের রাশিয়ায় বেআইনিভাবে নির্বাসনের অভিযোগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

মস্কো বারবার ইউক্রেনের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে, তবে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এবং সংস্থা ইঙ্গিত করেছে যে, রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ করেছে। যুদ্ধের ফলাফল সবাইকে প্রভাবিত করবে বলেও নিজের বক্তব্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করেন জেলেনস্কি।

তিনি বলেন, রাশিয়ার লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনকে ‘আপনার বিরুদ্ধে, সুশৃঙ্খল আন্তর্জাতিক বিশ্ব ব্যবস্থার বিরুদ্ধে’ অস্ত্রে পরিণত করা। তিনি কয়েক মাস ধরে যে শান্তি সূত্রের রূপরেখা দিয়েছেন, তা শুধু ইউক্রেনের জন্য নয়, বাকি বিশ্বের জন্যও প্রযোজ্য বলে মন্তব্য করেন জেলেনস্কি।

টিএম