কানাডার শিখ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনতে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছে খালিস্তানপন্থী শিখদের রাজনৈতিক দল ‘শিখস ফর জাস্টিস’। যদি এই সময়সীমার মধ্যে হরদীপের হত্যাকারীদের প্রকাশ্যে না আসে, সেক্ষেত্রে সামনের সপ্তাহ থেকে কানাডার ভারতীয় দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করার হুমকিও দিয়েছে দলটি।

রাজধানী অটোয়া, টরন্টো এবং ভ্যানকুভার— কানাডার তিনটি শহরে দূতাবাস ও কনস্যুলেট কার্যালয় রয়েছে ভারতের। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার দাবি না মানলে আগামী সপ্তাহ থেকে তিনটি কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেবেন বলে কানাডার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ‘শিখস ফর জাস্টিস’র উপদেষ্টা ও মুখপাত্র গুরুপথবন্ত সিং পান্নুন।

মঙ্গলবার কানাডার বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে দেওয়া এক বার্তায় পান্নুন বলেন, ‘আমরা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকারী ও এই হত্যার পরিকল্পনাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। কানাডার সরকার যদি তাদের পরিচয় প্রকাশ না করে, সেক্ষেত্রে আগামী সপ্তাহ থেকে কানাডায় ভারতের দূতাবাস ও কনস্যুলেটের সামনে অবস্থান নেবে আন্দোলনকারীরা।’

‘আমরা ভারতের দূতাবাসগুলোকে অকার্যকর করে দেবো। কানাডায় তারা আর কাজ করতে পারবে না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা তা করব।’

কানাডার বসবাসকারী শিখ ধর্মাবলম্বীদের একজন নেতা ছিলেন হরদীপ সিং নিজ্জর। ১৯৭৭ সালে তিনি ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধর জেলা থেকে কানাডা গিয়েছিলেন, পরে সেখানাকার নাগরিকত্বও অর্জন করেন।

অন্যদিকে ভারতের একজন তালিকাভুক্ত ‘ফেরার’ সন্ত্রাসীও ছিলেন হরদীপ। ভারতের অন্যতম বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন খালিস্তানি টাইগার ফোর্স এবং ‘শিখস ফর জাস্টিস’ কানাডা শাখার নেতা ছিলেন তিনি। দু’টি সংগঠনই ভারতে নিষিদ্ধ। হরদীপকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করাতে আগ্রহী ছিল ভারত।

গত ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের ভ্যানকুভার শহরের একটি গুরুদুয়ারার (শিখ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়) কাছে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন হরদীপ।

এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সম্প্রতি ভারতকে সরাসরি দায়ী করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সোমবার কানাডার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে ট্রুডো বলেন, তার দেশের গোয়েন্দারা হরদীপ হত্যায় ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছেন।

কানাডার জন্য এই ঘটনাটি যে তীব্র অবমাননাকর, তা বোঝাতে গিয়ে পার্লামেন্ট ভাষণে ট্রুডো বলেন, ‘কানাডার মাটিতে একজন কানাডীয় নাগরিককে হত্যার সঙ্গে বিদেশি সরকারের জড়িত থাকার বিষয়টি আমাদের সার্বভৌমত্বের অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন।’

ভারতের সরকারের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীন, মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা যেভাবে কাজ করে, এই ঘটনা (হরদীপ হত্যা) সেই মৌলিক নিয়মনীতির পরিপন্থী।’

ট্রুডো পার্লামেন্টে এই অভিযোগ তোলার পরদিনই কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিসি উইং (র) কানাডা শাখার প্রধানকে বহিষ্কারাদেশ দেয় কানাডীয় সরকার।

এদিকে, ট্রুডোর এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে ভারত। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ‘কানডা সরকারের এই অভিযোগ অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ভারত বরারবরই আইনের শাসনে প্রতি দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।’

প্রসঙ্গত, ভ্যানকুভারের যে গুরুদুয়ারার সামনে নিহত হয়েছিলেন, সেটির পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন হরদীপ। সেই কমিটির অপর সদস্য এবং নর্থ আমেরিকান শিখ অ্যাসোসিয়েশনের নেতা হারকিরীত কাউর সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি (হারদীপ) ছিলেন আমাদের কাছে পিতার মতো, অভিভাবকের মতো। তার নিহতের ঘটনায় কানাডার শিখ কমিউনিটি কেঁপে উঠেছিল। কমিউনিটির সেই ক্ষোভ-যন্ত্রণা এখনও প্রশমিত হয়নি।’

সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস

এসএমডব্লিউ