আদিলুর-এলানের মুক্তি চেয়ে বিবৃতি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের
২০১৩ সালে ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ভুল তথ্য প্রচারের অভিযোগে করা মামলায় ২ বছর কারাবাসের সাজা পেয়েছেন মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান এবং সংস্থাটির পরিচালক এ এস এম নাসিরউদ্দিন এলান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের আওতায় দায়র করা এই মামলার রায় দিয়েছেন ঢাকার সাইবার আদালতের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত। সেই রায়ে মামলার দুই আসামি আদিলুর এবং এলানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
রায় ঘোষণার পর আদিলুর রহমান খান ও এ এস এম নাসির উদ্দিনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কারাগারে নেওয়ার আগে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় আদিলুর রহমান খান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি ন্যায়বিচার পাইনি। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।’
এদিকে, বিচারক রায় ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আদিলুর এবং এলানের সাজা প্রত্যাহার ও অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া শাখা।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪ টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করা এক বিবৃতিতে এ সম্পর্কে বলা হয়, ‘আজ মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের দুই কর্মকর্তা আদিলুর রহমান খান এবং এ এস এম নাসিরউদ্দিন এলানকে ২ বছর কারাবাসের সাজা দিয়েছেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। কঠোর আইসিটি আইনের আওতায় এক দশক বিচারিক নিপীড়ন চালানোর পর তাদের সাজা দেওয়া হয়েছে।’
‘২০১৩ সালের একটি প্রতিবাদসভা দমনে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনার ওপর একটি অনুসন্ধানি প্রতিবেদন প্রকাশের দায়ে গত এক দশক ধরে নানাভাবে ধারাবাহিক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে অধিকার এবং তার কর্মকর্তাদের।
‘সত্য বলার অধিকার সবারই রয়েছে এবং মানবাধিকাল লঙ্ঘণের ঘটনা প্রকাশ করা কোনো অপরাধ নয়। বাংলাদেশের সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, (আদিলুর) খান এবং এলানকে যেন দ্রুত এবং নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হয়।’
‘আমরা খান এবং এলানের পক্ষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করছি। #ফ্রিখান #ফ্রিএলান’
— Amnesty International South Asia, Regional Office (@amnestysasia) September 14, 2023
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে ওই বছর ১০ জুন মানবাধিকার সংস্থা অধিকার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, শাপলা চত্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ৬১ জন নিহত হয়েছেন।
তারপর ওই বছরের ১০ জুলাই অধিকারের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন ও ৬১ জনের নাম-ঠিকানা চেয়ে সংস্থাটির ঠিকানায় চিঠি পাঠায় তথ্য মন্ত্রণালয়; কিন্তু তার জবাবে অধিকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার যদি হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে এ ঘটনা তদন্তের জন্য নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করে, তাহলে সেই কমিটির কাছে তালিকা হস্তান্তর করা হবে।
তারপর বিকৃত তথ্য প্রচারের মামলার আসামি হিসেবে ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয় আদিলুর এবং এলানকে। পরের দিন ১১ আগাস্ট আদালতের অনুমতি নিয়ে অধিকারের কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে দু’টি কম্পিউটার ও দু’টি ল্যাপটপ জব্দ করে পুলিশ।
যে মামলায় আদিলুর ও এলানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, সেটির শুনানি শেষ হয়েছে গত ২৪ আগস্ট। ওই দিন রায় ঘোষণার দিন হিসেবে ৭ সেপ্টেম্বর ধার্য করেছিলেন আদালত। তারপর ৭ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা না করে পরবর্তি দিন ধার্য করা হয়। আজ ১৪ সেপ্টেম্বর ছিল সেই দিন।
এসএমডব্লিউ