জলবায়ু পরিবর্তন
বাংলাদেশসহ ৪ দেশের গার্মেন্ট খাতে ৬৫ বিলিয়ন ডলার লোকসানের শঙ্কা
জলবায়ু পরিবর্তন ও তার জেরে অতি গরম ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ২০২৫ থেকে ২০৩০— ৫ বছরে গার্মেন্ট খাতে অন্তত সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার লোকসান গুণতে বাধ্য হবে বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তান।
ব্রিটেনভিত্তিক বহুজাতিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি স্ক্রোডের্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য। বুধবার প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এশিয়ার এ দেশগুলো তৈরি পোশাক বা গার্মেন্ট/অ্যাপারেলের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী। এই কারণে এই চারটি দেশকে সম্মিলিতভাবে ‘এশিয়ান অ্যাপারেল হাব’ নামেও পরিচিত।
স্ক্রোডের্স ও কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈরী আবহাওয়ার কারণে কেবল এশিয়ান অ্যাপারেল হাব নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিশ্বের সবচেয়ে সুপরিচিত ৬টি তৈরি পোশাকের ব্র্যান্ডও। ব্র্যান্ডগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়নি, তবে জানা গেছে— বর্তমান বিশ্বে প্রতিদিন তৈরি পোশাক থেকে যে মুনাফা আসে, তার একই উল্লেখযোগ্য অংশ যায় এই ছয় ব্র্যান্ডের ব্যাংক হিসাবে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে দীর্ঘ টানা তাপপ্রবাহ ও প্রবল বর্ষণ দেখা গেলেও মৌসুমি জলবায়ুপ্রধান দেশগুলোতে এসব দুর্যোগের হার অনেক বেশি। গবেষণা প্রতিবেদনটির মূল বক্তব্য হলো, আগামী সাত বছরে তাপপ্রবাহ বা অতি গরম বা তাপ প্রবাহ এবং অতি বর্ষণজনিত কারণে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে গার্মেন্ট মালিক এবং শ্রমিক উভয়কেই। এই দুই প্রাকৃতিক দুর্যোগের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে উৎপাদনে। অতি গরম বা টানা দীর্ঘ তাপপ্রবাহের কারণে একদিকে শ্রমিকদের উৎপাদনক্ষমতা হ্রাস পাবে, অন্যদিকে অতিবর্ষণ ও তার ফলে সৃষ্ট বন্যা ও জলাবদ্ধতাও উৎপাদনের কাঙিক্ষত লক্ষ্যমাত্রার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আর এসব সংকটই আগামী ৫ বছরে সাড়ে ৬ হাজার কোটি ডলার লোকসানের দিকে নিয়ে যাবে বাংলাদশসহ এশিয়ার অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই অর্থনৈতিক খাতকে।
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠন কর্নেল গ্লোবাল লেবার ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এবং গবেষক দলের অন্যতম সদস্য জ্যাসন জাড জানিয়েছেন, গার্মেন্ট শিল্প এবং এই শিল্প সম্পর্কে গভীর জ্ঞান না রাখা বিনিয়োগকারীরা— উভয়ের জন্যই তাদের এ প্রতিবেদন একটি সতর্ক সংকেত।
‘গবেষণার স্বার্থে বেশ কয়েক জন সরবরাহকারী/উদ্যোক্তা ও বায়ারের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে জলবায়ু পরিবর্তন, তার ফলে সৃষ্ট তাপপ্রবাহ- বন্যা এবং এসবের জেরে সম্ভাব্য লোকসান নিয়ে তাদের মধ্যে তেমন কোনো সচেতনতা নেই।’
‘জলবায়ু পরিবর্তন বলতে তারা বোঝে কেবল দুষণ ও কার্বন নিঃসরণ। তাপপ্রবাহ ও প্রবল বর্ষণের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে নিয়ে তাদের সচেতনতা খুবই কম,’ রয়টার্সকে বলেন জ্যাসন জাড।
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এই ধারণাটি একেবারেই নতুন গার্মেন্ট খাতে। কয়েকটি কোম্পনি অবশ্য এ সম্পর্কিত তথ্য রাখা শুরু করেছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।
গবেষকদলের সদস্য এবং স্ক্রোডের্সের সাসটেইনেবল ইনভেস্টমেন্ট রিসার্চ বিভাগের প্রধান, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও তার ফলে উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে অধিকাংশ অ্যাপারেল কোম্পানির কাছে কোনো তথ্য নেই। যেসব কোম্পানির কাছে আছে, তাদের তথ্যভান্ডারে তথ্যে পরিমাণ খুবই কম এবং সেসব তথ্য কোম্পানি কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করতে চায় না।’
সূত্র : রয়টার্স
এসএমডব্লিউ