এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রশ্নে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশে সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের ওপর সরকারের পদ্ধতিগত এবং ব্যাপক নিপীড়নের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রেস ব্রিফিংয়ে একথা জানানো হয়েছে।
একইসঙ্গে এই ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি এবং এই অঞ্চলকে মার্কিন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার প্রসঙ্গটিও উঠে এসেছে। ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ইস্যুতে জাতিসংঘের মার্কিন দূতকে ১৪ কংগ্রেসম্যানের চিঠি
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক ম্যাথিউ মিলারের কাছে বাংলাদেশে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভের সফর এবং সফরকালীন বাংলাদেশে মার্কিন হস্তক্ষেপের বিষয়ে তার দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চান।
ওই সাংবাদিক বলেন, জি-২০ সম্মেলনের ঠিক আগে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ বাংলাদেশ সফর করেন এবং ঢাকায় তিনি বলেন, মস্কো এই অঞ্চলে মার্কিন আদেশ ও হস্তক্ষেপ প্রতিষ্ঠার যে কোনও প্রচেষ্টাকে প্রতিরোধ করবে। এবং ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির নাম দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখানে এসে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল সম্পর্কে আপনার অবস্থান কী?
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি সম্মানের সাথে রাশিয়াকে বলব, যে দেশ তার দুটি প্রতিবেশী দেশকে আক্রমণ করেছে, যারা এখনও (ইউক্রেনে) আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে এবং সেখানে তারা প্রতিদিন স্কুল, হাসপাতাল এবং আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংগুলোতে বোমা হামলা চালাচ্ছে, তাদের অন্য কোনও দেশের ওপর আদেশ চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কথা বলা উচিত নয়। এটি মোটামুটি - এটি সের্গেই ল্যাভরভের করা সবচেয়ে আত্মসচেতন মন্তব্য নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির ক্ষেত্রে আমি বলব, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে অবাধ ও উন্মুক্ত, সংযুক্ত, সমৃদ্ধ, নিরাপদ এবং স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের অভিন্ন লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এটাই আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের উদ্দেশ্য এবং এটাই আমাদের অবস্থান।
এরপর ওই সাংবাদিক দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাক্ষাৎ নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন- বাইডেন ও শেখ হাসিনার মধ্যে ভালো কথোপকথন হয়েছে, যদিও আমরা হোয়াইট হাউস বা স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে এ বিষয়ে কোনও রিডআউট বা বিবৃতি জাতীয় কিছু দেখিনি?
জবাবে মিলার বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অন্য যেসব নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন সে বিষয়ে হোয়াইট হাউস বিস্তারিত প্রকাশ করেছে বলে আমি বিশ্বাস করি।
পরে ওই সাংবাদিক বাংলাদেশে সাংবাদিক নিপীড়নের বিষয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুই সিনিয়র সাংবাদিককে আদালত সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে এবং নিউইয়র্কে নির্বাসিত একজন সাংবাদিকের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সরকার সাংবাদিক-প্রতিবেদক ও সিনিয়র সম্পাদকদের যে হয়রানি করছে, এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, যে কোনও গণতান্ত্রিক দেশে সাংবাদিকরা অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেন। তাদের কাজ দুর্নীতি উন্মোচন করে, জনসাধারণের তথ্য জানার অধিকার রক্ষা করে। মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনে যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয় সে সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার সুযোগ দেওয়া দরকার। তাদের নির্বাচিত নেতাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং আমি এখানে প্রতিদিন যা বলি তার জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করি।
তিনি আরও বলেন, হয়রানি, সহিংসতা বা ভয়ভীতি ছাড়াই সাংবাদিকদের কাজ করতে দিতে হবে। এবং সরকারকে জবাবদিহি করার চেষ্টা করে যাওয়া সাংবাদিক এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের ওপর বাংলাদেশ সরকারের পদ্ধতিগত এবং ব্যাপক নিপীড়নের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন।
টিএম