ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল ও তার প্রভাবে প্রবল ঝড়ো হাওয়া-বর্ষণ-বন্যা-জলোচ্ছ্বাসে লিবিয়ার উপকূলীয় শহর দেরনা ও তার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজারে পৌঁছেছে। পূর্ব লিবিয়ার স্বঘোষিত সরকারের রাজধানী বেনগাজি থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে এই তথ্য।

ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল ও তার প্রভাবে প্রবল বর্ষণ ও বন্যায় লিবিয়ার উপকূলীয় শহর দারনাসহ অন্যান্য উপকূলী শহরগুলোতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজারে পৌঁছেছে। পূর্ব লিবিয়ার স্বঘোষিত সরকারের রাজধানী বেনগাজি থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে এই তথ্য।

এ ছাড়াও এখন পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। বৈশ্বিক মানবিক সহায়তা সংস্থা রেডক্রস অ্যান্ড রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির লিবিয়া শাখার প্রধান তামের রমজান জানান, তাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, ঝড়ের পর থেকে এখনও দেরনা ও তার আশপাশের এলাকায় এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ১০ হাজার জন।

সোমবার ভূমধ্যসাগরে উদ্ভূত ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল লিবিয়ার পূর্ব উপকূলে আছড়ে পড়ে। প্রবল ঝড়ো হাওয়া-বর্ষণ ও জলোচ্ছ্বাসে শত শত বাড়িঘর উড়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেরনা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী ওয়াদি দেরনার দু’টি বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ায় গোটা শহর প্রায় ভেসে যায়। লিবিয়ার আবহাওয়া দপ্তর ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঝড়ের সময় সাগর থেকে অন্তত ৮ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস আঘাত হেনেছে শহরটিতে।

উপকূলীয় শহর হওয়ায় ঝড়ের আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেরনা। ঝড়ো হাওয়া-জলোচ্ছ্বাস ও বাঁধভাঙা বন্যায় গোটা শহর কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে। 

ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-বন্যায় দেরনার প্রায় সব আবাসিক ভবন ধসে গেছে। শহরের ভেতরকার  বড় একটি সেতুকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদক মালিক ত্রাইনা বর্তমানে দেরনায় অবস্থান করছেন। বেনগাজি প্রশাসনের বরাত দিয়ে তিনি জানান, নিহতের সংখ্যা সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজারে উন্নীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ত্রাইনা বলেন, ‘বেনগাজি প্রশাসনকে দেরনায় পৌঁছাতে বেশ কষ্ট করতে হচ্ছে। কারণ বন্যা-জলোচ্ছ্বাসে শহরের সব রাস্তা ও সংযোগকারী সড়কগুলো ভেঙে চুরে গেছে। অনেক জায়গায় সড়ক নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্নও হয়ে গেছে।’

সোমবার ঝড়ের পর থেকে লিবিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে দেরনার যাবতীয় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে শহরটির হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়েও বেগ পেতে হচ্ছে সাংবাদিকদের।

২০১১ সালে বিদ্রোহী সামরিক গোষ্ঠির হাতে প্রেসিডেন্ট ‍মুয়াম্মার গাদ্দাফি নিহত হওয়ার পর গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়া। বর্তমানে ১৭ লাখ ৫৯ হাজার ৫৪১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটি পূর্ব ও পশ্চিম— দুই ভাগে বিভক্ত।

বেনগাজি শহরকে পূর্ব লিবিয়ার রাজধানী ঘোষণা করেছে বিদ্রোহী সরকার। তবে এই সরকার এখন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ বা বৈশ্বিক কোনো স্বীকৃতি পায়নি। দেশটির মূল রাজধানী ত্রিপোলিতে আসীন সরকারই এখনও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।   

মঙ্গলবার ত্রিপোলির প্রধানমন্ত্রী আবদুল হাবিদ দিবেইবাহ এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, একটি সরকারি উড়োজাহাজে দেরনার উপদ্রুত লোকজনের জন্য ১৪ টন খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী এবং চিকিৎসকদের একটি দল আজই পাঠানো হচ্ছে।

এসএমডব্লিউ