বিশ্বের অন্যতম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন ট্রেনে করে রাশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। রাশিয়ায় গিয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করবেন— বিশ্ব গণমাধ্যমে সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) এমন খবর জানানো হয়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ধীরগতির নিজস্ব বুলেট প্রুফ ট্রেনে ২০ ঘণ্টায় ১ হাজার ১৮০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রাশিয়ায় পৌঁছাবেন কিম। বলা হচ্ছে— এই ট্রেনটিতে একটি আস্ত রেস্টুরেন্ট রয়েছে। যেটিতে পাওয়া যায় ফরাসি ওয়াইন ও উন্নতমানের গলদা চিংড়ি।

রেস্টুরেন্ট ছাড়াও কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত এই ট্রেনটিতে রয়েছে আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা। তবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় এ ট্রেনটি ঘণ্টায় মাত্র ৫০ কিলোমিটার বেগে ছুঁটতে পারে।  

এই ট্রেনটির ভেতর কী কী সুবিধা আছে সেটির কিছুটা ধারণা পাওয়া গেছে, এতে চড়া কয়েকজন যাত্রীর বর্ণনাতে।

তাদেরই একজন রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সাবেক কমান্ডার কোনস্টানটিন পুলিকোভস্কি। তিনি ২০০১ সালে উত্তর কোরিয়ার সাবেক নেতা কিম জং দুই-এর সঙ্গে এই ট্রেনে চড়েছিলেন। নিজের আত্মজীবনী ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেসে ট্রেনটির বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।

এতে তিনি লিখেছেন, ‘ট্রেনের ভেতর রাশিয়ান, চাইনিজ, কোরিয়ান, জাপানিজ এবং ফরাসি খাবার অর্ডার দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, ট্রেনে জীবন্ত চিংড়ি নিয়ে নেওয়া হয়েছিল, যেন তাজা খাবার পরিবেশন করা যায়। এছাড়া এতে ফ্রান্স থেকে আনা ওয়াইনও ছিল।

এই সামরিক কর্মকর্তা তার আত্মজীবনীতে এমনকি বলেছিলেন, ‘পুতিনের ব্যক্তিগত ট্রেনেও এসব সুযোগ-সুবিধা নেই যা এই ট্রেনে আছে।’

রাশিয়ার অপর এক কূটনীতিক, জর্জি তোলোরায়া, ২০১৯ সালে এক লেখনিতে ২০০১ সালে ট্রেনটিতে চড়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ট্রেনটির ভেতর সুস্বাদু গাধার মাংস এবং এক ধরনের ঝিনুক ছিল। এছাড়া রাশিয়ান মদও ছিল এতে।

এই দুইজনই জানিয়েছেন, ট্রেনের যাত্রীদের বিনোদনের জন্য সঙ্গীত শিল্পীসহ আরও অনেক ব্যবস্থা ছিল।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, ২০১১ সালে এই ট্রেনের ভেতরই হার্টঅ্যাটাক করে মারা গিয়েছিলেন কিম জং দুই।

২০০৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম ডেইলি কোসুন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, এই ট্রেনটিতে ৯০টির মতো বগি আছে। সবুজ রঙ ও হলুদ রঙের ডোরা কাটা এই ট্রেনটির ভেতর কনফারেন্স রুম, অডিয়েন্স চেম্মার এবং বেডরুম রয়েছে। এছাড়া এতে স্যাটেলাইট ফোন এবং বড় আকারের টেলিভিশনের পর্দা আছে।

এছাড়া ট্রেনটির প্রকাশিত কয়েকটি ছবিতে দেখা গেছে এতে চামড়ার তৈরি চেয়ার রয়েছে।

কখন শুরু হয় এই ট্রেনের যাত্রা

উত্তর কোরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের দাদা কিম টু সাংয়ের সময় এই ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়। তিনি ট্রেনটিতে করে ভিয়েতনাম এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে গিয়েছিলেন।

বলা হয়, এই ট্রেনগুলোকে নিরাপত্তা দিয়ে থাকে ভারী অস্ত্রবাহী সেনারা। নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা এসব সেনা লাইন পরীক্ষা করা এবং পরবর্তী স্টেশনে কোনো ধরনের বোমা হামলার ঝুঁকি আছে কি না সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন।

কিম জং উনের বাবা ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত উত্তর কোরিয়াকে শাসন করেন। একটি মতবাদ ছিল, কিমের বাবা প্লেনে উঠতে ভয় পেতেন। এ কারণে তিনি ট্রেনে করেই বেশি যাতায়াত করতেন।

কিমের বাবা ২০০১ সালে দীর্ঘ ১০ দিন ট্রেন ভ্রমণ করে রাশিয়ায় পৌঁছেছিলেন। সেবার তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন।

এদিকে কিম জং উন সর্বশেষবার পুতিনের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাত করেছিলেন ২০১৯ সালে। সেবার তিনি ট্রেনে চেপে গিয়েছিলেন রাশিয়ার সূদুর পূর্বাঞ্চলের ভ্লাদিবোসতোকে।

যদি এবার সত্যিই তিনি আবার ট্রেনে করে রাশিয়ায় যাত্রা শুরু করে থাকেন— তাহলে তাকে বহনকারী ট্রেনটি উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে ছেড়েছে। এরপর এটি তুমাংগ্যাং স্টেশন হয়ে রাশিয়ার সীমান্তে যাবে। সেখান থেকে রাশিয়ান লাইনে ওঠবে ট্রেনটি। উত্তর কোরিয়ার লাইন থেকে রাশিয়ার লাইনে প্রবেশ করতে ট্রেনটির কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে।

সূত্র: বিবিসি

এমটিআই