রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (ফাইল ছবি)

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ব্রাজিলে গ্রেপ্তার করা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে চলমান জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোর এই জোটের পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলন ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা শনিবার বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদি আগামী বছর রিও ডি জেনিরোতে গ্রুপ অব ২০ সভায় যোগ দেন তবে তাকে ব্রাজিলে গ্রেপ্তার করা হবে না।

দিল্লিতে জি-২০ সভার ফাঁকে নিউজ শো ফার্স্টপোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লুলা বলেন, পুতিনকে আগামী বছরের শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হবে। তিনি বলেন, ব্রাজিলে সেই সম্মেলনের আগে রাশিয়ায় ব্রিকস ব্লকের দেশগুলোর একটি বৈঠকে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি।

লুলা বলেন, আমি বিশ্বাস করি পুতিন সহজেই ব্রাজিলে যেতে পারবেন। তার ভাষায়, ‘আমি যদি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট থাকি এবং তিনি (পুতিন) ব্রাজিলে আসেন, তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে না।’

উল্লেখ্য, ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ করার অভিযোগে চলতি বছরের মার্চ মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। পুতিনের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, তিনি বেআইনিভাবে ইউক্রেনের শিশুদের রাশিয়াতে সরিয়ে নিয়েছেন।

আদালত বলছে, এই অপরাধ গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর থেকেই ঘটে চলেছে। একই অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের শিশু অধিকার বিষয়ক কমিশনার মারিয়া এলভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও।

মূলত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের হাতে বিচারিক ক্ষমতা থাকলেও কোনও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা নেই। আইসিসি যা করতে পারে তা হলো, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিভিন্ন দেশের সহায়তায় গ্রেপ্তার করা এবং গ্রেপ্তারের পরে তাকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে বিচারের জন্য হাজির করা।

এছাড়া আইসিসি তার বিচারিক ক্ষমতাও শুধু সেসব দেশে প্রয়োগ করতে পারে, যে দেশগুলো এই আদালত গঠন করতে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। চুক্তিটি রোম সংবিধি নামে পরিচিত। রাশিয়া এই সংবিধিতে স্বাক্ষর করেনি। তাই পুতিন বা মারিয়া এলভোভা-বেলোভাকে আপাতত এই আদালতের হাতে সমর্পণের কোনও সুযোগ নেই।

তবে ব্রাজিল রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী দেশ। কিন্তু লুলার এই মন্তব্যের পর তার কার্যালয় তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।

রয়টার্স বলছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট পুতিন বারবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আয়োজিত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মেলন ও বৈঠক এড়িয়ে গেছেন। গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে পুতিন উপস্থিত হননি এবং দিল্লিতে চলমান জি-২০ ইভেন্টেও রাশিয়ার এই প্রেসিডেন্ট নিজে উপস্থিত না হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে পাঠিয়েছেন।

শনিবার সম্মেলনের প্রথমদিনই সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সবার সম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে সম্মেলনের আয়োজক দেশ ভারতের উত্থাপিত ‘নয়াদিল্লি ঘোষণা’। ওই ঘোষণায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনও নিন্দা জানানো হয়নি।

তবে কোনও অঞ্চল দখলের জন্য শক্তি ব্যবহার না করতে সকল রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে ওই ঘোষণায়।

টিএম