প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর ঢাকা সফর
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে সম্পৃক্ততা আরও বাড়াতে চায় ফ্রান্স
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসগরীয় অঞ্চলে সম্পৃক্ততা আরও বাড়াতে চায় পশ্চিম ইউরোপের দেশ ফ্রান্স। এছাড়া আসন্ন জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিয়ে ‘বৈশ্বিক বিভাজনের’ বিরুদ্ধেও নিজেদের অবস্থান জানাতে চান ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর ভারতের রাজধানী দিল্লিতে জি-২০ সদস্য দেশগুলোর এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে এবং সেখানে এই বার্তা দেবেন তিনি। ফরাসি সরকারের বরাত দিয়ে গত মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী গ্রুপ অব টোয়েন্টি বা জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর ভারত সফর করবেন এবং ‘বৈশ্বিক বিভাজনের’ বিরুদ্ধে সেখানে কথা বলবেন তিনি।
এছাড়া ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফরের সময় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সাথে ফ্রান্সের সম্পৃক্ততা আরও গভীর করার দিকে মনোনিবেশ করবেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। গত সোমবার ফরাসি সরকার এসব তথ্য জানিয়েছে।
দ্য হিন্দু বলছে, গত জুলাই মাসে কলম্বোতে ঐতিহাসিক সফর দিয়ে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ দক্ষিণ এশিয়ার সাথে ফরাসি সম্পর্কের পরিধি প্রসারিত করতে শুরু করেন। আবার এবার তিনি ভারত ও বাংলাদেশে সফর করবেন এবং তার আসন্ন এই সফরকে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ফ্রান্সের জোরালো মনোযোগ থাকার বিষয়টিকেই ইঙ্গিত করছে। বস্তুত ঔপনিবেশিক যুগেও এই অঞ্চলে ফরাসিদের ঐতিহাসিক উপস্থিতি ছিল।
ঢাকায় ফরাসি দূতাবাসের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ফরাসি প্রেসিডেন্ট আগামী ৯ এবং ১০ সেপ্টেম্বর জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে নয়াদিল্লিতে যাবেন। এরপর তিনি দ্বিপাক্ষিক সফরে ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসবেন। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন ফরাসি প্রেসিডেন্টকে বৈশ্বিক বিভাজনের ঝুঁকির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সকল মহাদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ দেবে। বাংলাদেশে ফ্রান্সের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসহাগরীয় অঞ্চলের কৌশল নিয়ে আলোচনা করবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।’
দ্য হিন্দু বলছে, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে শ্রীলঙ্কা সফর করেন এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে দেখা করেন। এর আগে তিনি পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পাপুয়া নিউগিনি এবং ভানুয়াতু সফর করেন। এই তিনটি দ্বীপ রাষ্ট্রে সফরের সময় প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ এসব দেশ ঋণ সংক্রান্ত যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে তার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন। সেসময় তিনি চীনের নাম না নিয়েই প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলোকে লক্ষ্য করে ‘নব্য-সাম্রাজ্যবাদী’ প্রবণতার সমালোচনা করেন। এমনকি কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার ঋণের বোঝা পুনর্গঠনে প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহেকে আশ্বাসও দিয়েছিলেন ম্যাক্রোঁ।
সংবাদমাধ্যম বলছে, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য ভারত সফর এবং পরে সেখান থেকে বাংলাদেশে সফর একে অপরের থেকে ভিন্ন বিষয়। কারণ ভারত গত সিকি শতাব্দী ধরে ফ্রান্সের কৌশলগত অংশীদার এবং প্যারিসের জন্য ঢাকায় আর্থিক ও কৌশলগত প্রলোভন রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারও ফ্রান্সের সাথে সম্পর্ক উষ্ণ করেছে।
ঢাকা সফরকারী শেষ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ছিলেন ফ্রাঁসোয়া মিটাররান্ড। তিনি ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং বাংলাদেশকে বন্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
সোমবার ঢাকার ফরাসি দূতাবাস ইঙ্গিত দিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর ঢাকা সফরের সময় পুরোনো কিছু বিষয়ে আলোচনা করা হতে পারে। দূতাবাস বলেছে, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতায় বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হওয়ায় মানবিক কারণে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ফ্রান্সের দৃঢ় ইচ্ছার কথা স্মরণ করবেন ম্যাক্রোঁ।’
সরকারি ওই বিবৃতিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় এবং জাতিসংঘের অধীনে বৈশ্বিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের ভূমিকাকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
ঢাকায় ফ্রান্সের পর্যবেক্ষকরা উল্লেখ করেছেন, প্যারিস বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে লালমনিরহাটে অবস্থিত একটি বিমানঘাঁটির দিকে নজর রেখেছে যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত হয়েছিল। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত এই বিমানবন্দরটির আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে এবং এটি কৌশলগতভাবেও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
অন্যদিকে প্রথমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর শেখ হাসিনা ১৯৯৯ সালে প্যারিস সফরে গিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে ওয়ান প্ল্যানেট সম্মেলনের জন্য ২০১৭ সালে ফ্রান্সের রাজধানীতে যান। এরপর ২০২১ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এলিসি প্যালেসে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ স্বাগত জানিয়েছিলেন।
সর্বশেষ সেই বৈঠকে উভয়পক্ষই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে আলোচনায় অগ্রাধিকার দিয়েছিল।
টিএম