ফিলিস্তিনকে অর্থ দিয়ে কিনতে চায় সৌদি আরব!
মধ্যপ্রাচের ইহুদিবাদী ইসরায়েল সৌদি আরবের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ফিলিস্তিন এবং মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর চাপের কারণে সৌদি এক্ষেত্রে খুব বেশি আগ্রহ দেখায় না।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করার পথে ‘এক ধাপ’ এগোতে চায় সৌদি। আবার ইসরায়েলিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ফিলিস্তিনিদের ‘হতাশ বা ক্ষুব্ধ’ করতে চায় না রিয়াদ। আর কারণে তারা ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে, সৌদি আবারও ফিলিস্তিনি সরকারকে আর্থিকসহ অন্যান্য সহায়তা দেবে যদি তারা ‘ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে সায় দেয়।’
বিজ্ঞাপন
২০২১ সাল থেকে ফিলিস্তিনি সরকারকে সব ধরনের সহায়তা বন্ধ করে দেয় সৌদি। দেশটির কয়েকটি সূত্র ওয়ালস্ট্রিটকে জানিয়েছেন, সৌদির আশা যদি এখন আবারও তারা সহায়তা দেন তাহলে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়লে ফিলিস্তিনি নেতাদের সমর্থন পাওয়া যাবে। সঙ্গে আবার সমালোচকদের মুখও বন্ধ করা যাবে। যারা বলবেন— নিজেদের স্বার্থে ফিলিস্তিনিদের পরিত্যাগ করেছে রিয়াদ।
অবশ্য সৌদির এ প্রস্তাবের বিষয়টি নিয়ে ফিলিস্তিন ভাবছেও। যদিও আলাদা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে দেশটির নেতৃবৃন্দ এখনো এক আছেন। কীভাবে দ্রুত স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায় সে ব্যাপারে কথা বলতে আগামী সপ্তাহে সৌদিতে একটি প্রতিনিধি দলও পাঠাবে তারা।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল আরও জানিয়েছে, গত এপ্রিলে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করেন সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। ওই সময় তিনি আব্বাসকে এ প্রস্তাবটি দেন।
অবশ্য সাহায্যের বিষয়টি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। ফিলিস্তিনের বর্তমান যে সরকার রয়েছে তারা মূলত পুরো ফিলিস্তিন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আর এ সুযোগে ফিলিস্তিনে বিভিন্ন ইসরায়েল বিরোধী ও স্বাধীনতাপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছে। এসব গোষ্ঠী মাহমুদ আব্বাস সরকারকে তোয়াক্কা করে না। সৌদির বিশ্বাস যদি তারা ফিলিস্তিনকে আবারও সহায়তা দেওয়া শুরু করে তাহলে অধিকৃত পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিনের বর্তমান সরকারের বৈধতা আবারও বাড়বে।
সশস্ত্র গোষ্ঠীর লাগাম টেনে ধরতে বলেছে সৌদি আরব
ফিলিস্তিনের বর্তমান সরকার ফিলিস্তিনি অথরিটি বা পিএ নামে পরিচিত। ১৯৯৪ সালে অসলো চুক্তির মাধ্যমে এটির জন্ম হয়। এই পিএ-এর কাজ ছিল স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা। কিন্তু দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি এবং সাধারণ মানুষের জীবন মান কমে যাওয়ায় পিএ-এর জনপ্রিয়তা কমে গেছে।
এরমধ্যে ফিলিস্তিনে তৈরি হয়েছে নতুন প্রজন্মের একটি সশস্ত্র দল। যারা জেনিন, নাবলুস এবং হেব্রনে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে।
ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, সৌদি আরব ফিলিস্তিন সরকারকে জানিয়েছে, যদি তারা এসব সশস্ত্র যোদ্ধাদের লাগাম টেনে ধরতে পারে— তাহলে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করবে না রিয়াদ। কারণ সৌদি যদি ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করে তাহলে বিষয়টি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টিকে হুমকির মুখে ফেলে দেবে।
গত মাসে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি বলেছিলেন, তারা আশা করেন সৌদি যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে নতি স্বীকার করবে না এবং ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে যে শর্ত সৌদি দিয়েছে— পশ্চিম তীর থেকে দখলদার ইসরায়েলিদের চলে যেতে হবে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে— সেই শর্ত থেকে তারা সরে যাবে না।
মোহাম্মদ বিন সালমানকে আল-আকসার দায়িত্ব দিলে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে রাজি হতে পারে সৌদি
ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে সেই ২০০২ সাল থেকে আলোচনা করছে সৌদি। তবে এক্ষেত্রে সৌদির শর্ত ছিল— সম্পর্ক স্থাপন করতে হলে আগে আলাদা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। যেই রাষ্ট্রের অংশ হবে পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা। আর রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম।
সৌদি সেই অবস্থান থেকে প্রকাশ্যে এখনো সরে আসেনি। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন মনে করে, ওই শর্ত পূরণ না করেও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে সৌদিকে রাজি করানো যেতে পারে।
যার অন্যতম হলো আল-আকসা মসজিদের দায়িত্ব মোহাম্মদ বিন সালমানকে দেওয়া। ফিলিস্তিনে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ দেখভালের দায়িত্বে বর্তমানে রয়েছে জর্ডানের রাজ পরিবার।
অবশ্য সৌদি আরবেরও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এক্ষেত্রে কিছু দাবি-দাওয়া আছে। তারা ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের আগে মার্কিনিদের কাছ থেকে বিভিন্ন সামরিক সুযোগ-সুবিধা আদায় করার চেষ্টা করবে।
সূত্র: ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল
এমটিআই