প্রাণঘাতী রোগ এইডসের ওষুধের দাম কমাতে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থার বিশেষ তহবিল ‘গ্লোবাল ফান্ডের’ সঙ্গে সম্প্রতি এই চুক্তি হয়েছে বলে বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, এইডসের জন্য বর্তমানে প্রচলিত সবচেয়ে জনপ্রিয় তিন ওষুধ টেনোফোভির ডিসোপ্রোক্সিল ফুমারেট, লামিভুডিন এবং ডোলুটেগ্রাভিরের জেনেরিক (ভিন্ন নামের একই ওষুধ) প্রস্তুত করবে কোম্পানিগুলো। সেই জেনেরিকের নাম হবে ‘টিএলডি’। তিনটি ওষুধের জেনেরিকেরই একই নাম হবে।

প্রসঙ্গত, অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনো ডেফিশিয়েন্সি সিনড্রোম বা এইডস আসলে একই সঙ্গে রোগ এবং রোগলক্ষণসমষ্টি। হিউম্যান ইমিউনো ভাইরাস (এইচআইভি) নামের বিশেষ একটি ভাইরাস এই রোগের জন্য দায়ী।

মানবদেহে এই ভাইরাসটি প্রবেশ করতে সক্ষম হলে সেটি মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও প্রতিরক্ষাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে, একজন এইডস রোগী খুব সহজেই যে কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, যা শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু ঘটাতে পারে।

১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এইডসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ওই বছরই দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস এইচআইভিও শনাক্ত করে।

অনিরাপদ যৌনতা, ব্যাবহৃত সিরিঞ্জের সূঁচের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে এইচআইভি ভাইরাস। এছাড়া, মায়ের মাধ্যমেও এইডসে আক্রান্ত হয় শিশুরা। কোনো গর্ভবতী নারীর দেহে এইডসের জীবাণু থাকলে তা অনাগত সন্তানকেও সংক্রমিত করে।

বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের তুলনায় আফ্রিকার সাব সাহারা, পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের এইডসের প্রকোপ বেশি। আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, বিশ্বের বেশিরভাগ এইডস রোগী দেখা যায় বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি, রুয়ান্ডা, তানজানিয়া ও জিম্বাবুয়েতে। আফ্রিকার এই ৫ দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশই এইডসে আক্রান্ত।

দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর এইডস, যক্ষা এবং ম্যালেরিয়া রোগীদের হ্রাসকৃতমূল্যে ওষুধ সরবরাহের জন্য ২০০২ সালে ‘গ্লোবাল ফান্ড’ নামের এই তহবিলটি করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

ডব্লিউএইচও’র বুধবারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যেসব দেশের মোট জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ এইডসে আক্রান্ত, কিন্তু রোগীদের অধিকাংশেরই ওষুধ কেনার আর্থিক সামর্থ্য নেই— তাদের জন্যই এই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, শিগগিরই স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে এইডসের ওষুধের দাম ২৫ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পাবে।’

‘আমরা আরও আশা করছি, ওষুধের দাম হ্রাস হলে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে এইডস রোগীদের চিকিৎসার সুযোগ বাড়বে এবং সরকার ও বিনিয়োগকারীরা এইডসের চিকিৎসায় বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী হয়ে উঠবেন।’

আন্তর্জাতিক দাতব্য স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা ক্লিনটন হেলথ একসেস ইনিশিয়েটিভস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ডব্লিউএইচওর এই উদ্যোগের ফলে বিশ্বজুড়ে উপকৃত হবেন অন্তত ১ কোটি ৯০ লাখ এইডস রোগী।

সূত্র : এএফপি

এসএমডব্লিউ