ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করাকে অন্যতম বড় অর্জন বলে মনে করছে দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর নিজেই এই তথ্য জানিয়েছেন।

এনডিটিভির সঙ্গে কথপোকথনে জয়শঙ্কর এই মন্তব্য করেন বলে মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ভারতীয় এই সংবাদমাধ্যমটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলকে ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর মধ্যে একটি’ বলে অভিহিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ভারতীয় সংবিধানের এই ধারার কারণেই ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মিরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল এবং ২০১৯ সালের আগস্টে বিতর্কিতভাবে তা বাতিল করে মোদি সরকার।

জয়শঙ্কর বলেছেন, ২০১৯ সালে তিনি ভারতীয় মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন এবং তখন যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তার সাথে তিনিও জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কীভাবে আমরা ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই পরিস্থিতি সহ্য করেছি... কীভাবে আমরা এই পরিস্থিতিকে এত দিন ধরে চলতে দিয়েছি; এটি ভেবে আমি এখনও বিস্মিত হই।’

অবশ্য জম্মু ও কাশ্মিরের পরিবর্তন সম্পর্কে তিনি বলেন, (বিশেষ মর্যাদা বাতিলের এই সিদ্ধান্ত) ব্যাপকভাবে ইতিবাচক হয়েছে।

জয়শঙ্করের দাবি, ‘আমি যখন ১৯৭৯ সালে সরকারে যোগদান করি তখন আমি সেখানে গিয়েছিলাম ... আমি ২০১৯ সালে একই জায়গায় গিয়েছিলাম ... এবং ১৯৭৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সেখানে কতটা পরিবর্তন হয়েছে তা দেখে আমি অবাক হয়েছি।’

এনডিটিভি বলছে, ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন এক সময়ে এসব কথা বললেন যখন কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা দেওয়া সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলকে চ্যালেঞ্জ করা একগুচ্ছ পিটিশনের শুনানি করছে ভারতের প্রধান বিচারপতি (সিজেআই) ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।

উল্লেখ্য, জওহরলাল নেহেরুর সময়ে ভারতীয় সংবিধানে কাশ্মিরকে দেওয়া বিশেষ মর্যাদা ৩৭০ ধারা ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট বাতিল করে ভারত। জম্মু ও কাশ্মির রাজ্য পুরোপুরি মুছে ফেলে এটিকে লাদাখ এবং জম্মু-কাশ্মির নামে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করা হয়।

মূলত দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দুটি দেশ পাকিস্তান ও ভারত বিতর্কিত কাশ্মিরের পুরোটাই দাবি করলেও উভয়েই এর কিছু অংশ শাসন করে থাকে। তারা এই হিমালয় অঞ্চল নিয়ে তিনটি যুদ্ধের মধ্যে দু’টিতে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।

কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছে। এখন উভয়েই পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হয়েছে তবে ইতিহাস বলছে, ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান আর ভারত স্বাধীনতা পাবার আগে থেকেই কাশ্মির নিয়ে বিতর্কের সূচনা হয়েছিল।

১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের পাশতুন উপজাতীয় বাহিনীগুলোর আক্রমণের মুখে কাশ্মিরের তৎকালীন হিন্দু মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগ দেওয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, এবং ভারতের সামরিক সহায়তা পান। পরিণামে ১৯৪৭ সালেই শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ।

উভয় দেশের এই যুদ্ধ চলেছিল প্রায় দু’বছর ধরে। এরপর কাশ্মিরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় ১৯৪৮ সালে, তবে পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করে। তখন থেকেই কাশ্মির কার্যত পাকিস্তান ও ভারত নিয়ন্ত্রিত দুই অংশে ভাগ হয়ে যায়।

অন্যদিকে ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে চীন কাশ্মিরের আকসাই-চিন অংশটির নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। আর তার পরের বছর পাকিস্তান - কাশ্মিরের ট্রান্স-কারাকোরাম অঞ্চলটি চীনের হাতে ছেড়ে দেয়।

সেই থেকে কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তান, ভারত ও চীন - এই তিন দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে।

টিএম