ভুল খুঁজে পেতেই চলে যায় এক বছর, ব্যর্থতার স্মৃতি ইসরো প্রধানের
মহাকাশে দীর্ঘ এক মাস ৯ দিনের যাত্রা শেষে বুধবার চাঁদের বুকে সফল অবতরণ করেছে ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩। এ সাফল্যের পরে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর প্রধান এস সোমনাথের মুখে বারবার ফিরে আসছে ২০১৯ সালের ব্যর্থতার স্মৃতি।
এটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, এক বছর তো এটা বুঝতেই কেটে গিয়েছিল, ভুল কোথায় ছিল!
বিজ্ঞাপন
সেই ব্যর্থতার পর কী ভাবে নতুন করে সব কিছু শুরু করতে হয়েছিল তার বর্ণনাও এসেছে তার কথায়। ইসরো প্রধান বলেন, মানুষ চাঁদে যেতে চায়। সেখানে থাকার মহল্লাও তৈরি করতে চায়। আমরা সেরা এলাকাটি খুঁজে বার করার চেষ্টা করছি।
বুধবার চাঁদে অবতরণ করে চন্দ্রযান-৩। এরপর বেরিয়ে আসে বিক্রমের ভেতরে থাকা প্রজ্ঞান। আগামী দু’সপ্তাহ (পৃথিবীর হিসাবে) চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে প্রজ্ঞান। তাকে সাহায্য করবে বিক্রম।
সোমনাথ বলেন, এক বছর ধরে শুধু ভুল খোঁজা। পরের বছর নতুন করে কাজ শুরু। মাঝে কোভিডের জন্যও বেশ কিছু কাজ পিছিয়ে যায়।
আগেরটা থেকে এবার বেশ কিছু পরিবর্তনও আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- বিক্রমের পা আরও শক্ত করা হয়েছে, যাতে সে নিরাপদে নামতে পারে। আগের যানটির দু’টি মুখে সোলার প্যানেল ছিল। এ বার চারটি মুখেই সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। এ ছাড়া, চাঁদে সফ্ট ল্যান্ডিংয়ের জন্য আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ অবতরণের শেষ ধাপেই ভেঙে পড়েছিল চন্দ্রযান-২।
• এবার ভারতের পরিকল্পনায় চন্দ্রযান-৪, সঙ্গী জাপান
২৩ আগস্ট দিনটাও বেছে নেওয়া হয়েছিল ভেবেচিন্তে। পৃথিবীর এই দিনটায় চাঁদের দিন শুরু। চাঁদের একটা দিন, পৃথিবীর দু’সপ্তাহ। চাঁদে রাত নামার আগে ১৪ দিন সময় পাবে বিক্রম ও প্রজ্ঞান। এরপর রাত নামলে আবার পৃথিবীর হিসাবে ১৪ দিন ধরে অন্ধকার। এই সময়টায় রোভার সক্রিয় থাকবে না, কারণ সৌরশক্তি পাবে না সে। তাপমাত্রা মাইনাস ১৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছোঁবে। এই দিন-রাতের ঝঞ্ঝাটের জন্য ইসরো বিকল্প পরিকল্পনাও করেছিল। যদি বুধবার না নামতে পারত বিক্রম, তা হলে ২৯ দিন পরে ফের চেষ্টা করত সে। তার জন্য অতিরিক্ত জ্বালানিও মজুদ ছিল যানে।
কাজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রজ্ঞান। ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকা এই চারটি পে লোডের নাম দেওয়া হয়েছে- রম্ভা, চ্যাস্ট, ইলসা ও অ্যারে।
চাঁদের বুকে সূর্য থেকে আসা প্লাজমা কণার ঘনত্ব, পরিমাণ ও পরিবর্তনগুলো নিরীক্ষণ করবে রম্ভা। চ্যাস্ট মেপে দেখবে চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা। অবতরণস্থলের আশপাশের মাটির কম্পন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করবে ইলসা। ‘লেজার রেট্রোরিফ্লেক্টর’ অ্যারে চাঁদের গতিশীলতা বোঝার চেষ্টা করবে।
প্রাথমিকভাবে বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য অভিযানের প্রথম ১৪ দিন (পৃথিবীর হিসাবে)। তবে তাদের আশা, অন্ধকার দিনগুলো ঠিকই কাটিয়ে উঠবে বিক্রম ও প্রজ্ঞান। তারা দীর্ঘজীবী হবে।
এনএফ