কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেনের বন্দরের দিকে আসার সময় গত রোববার একটি কার্গো জাহাজ আটক করে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ। পরবর্তীতে জানা যায়, সেটি ছিল তুরস্কের মালিকানাধীন জাহাজ সুকরো ওকান। কীভাবে রুশ বাহিনী জাহাজটি আটক করেছিল— মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সঙ্গে— সেদিনের বিস্তারিত ঘটনা বর্ণনা করেছে এটির পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান।

তারা জানিয়েছে, জাহাজটি ইউক্রেনের ইজমাইল বন্দরে যাচ্ছিল। ওই সময় এটি খালি ছিল। ইজমাইল থেকে ‍তুরস্ক ও ইউরোপের বাজারের জন্য শস্য নেওয়া কথা ছিল এটির।

ওই সময় রেডিও বার্তার মাধ্যমে জাহাজটি থামানোর নির্দেশনা দেয় রুশ বাহিনী। কিন্তু জাহাজটির ক্যাপ্টেন সেটি শোনেননি। ভয় পেয়ে ওই সময় জাহাজের ক্যাপ্টেন দিক পাল্টে তুরস্কের দিকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

তার উদ্দেশ্য ছিল তার্কিস কোস্টগার্ড এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের কাছে দ্রুত পৌঁছে তাদের অধীনে চলে যাবেন।  

আরও পড়ুন>>> রুশ আগ্রাসনের মধ্যেই সমুদ্র সৈকত উন্মুক্ত করল ইউক্রেন

এর ঠিক পরই প্রথমে সতর্কতামূলক গুলি ছুড়ে রাশিয়ার নৌ সেনারা এবং যুদ্ধাজাহাজ নিয়ে এটির কাছে আসতে থাকে। এরপর যুদ্ধজাহাজ থেকে একটি হেলিকপ্টারে করে কয়েকজন সেনা জাহাজের দিকে আসতে থাকেন এবং আরও সতর্কতামূলক গুলি ছোড়েন। তখন জাহাজের ক্রুরা অপেক্ষা করতে থাকেন এবং রুশ সেনারা হেলিকপ্টারে এসে জাহাজে নামেন।

কার্গো জাহাজ সুকরো ওকানের ক্রুদের ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ভীতসন্ত্রস্ত কয়েকজন ক্রু ডেকে বসে আছেন আর হেলিকপ্টার তাদের ওপর চক্কর দিচ্ছে।

জাহাজে নেমে রাশিয়ার সেনারা জাহাজের ক্যাপ্টেনকে জিজ্ঞেস করেন কেন তিনি জাহাজটি থামাননি। তখন ক্যাপ্টেন সেনাদের জানান, তিনি আন্তর্জাতিক জলসীমায় ছিলেন এবং জাহাজ ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন ‘তার্কিস কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে জানাতে।’

এরপর রাশিয়ার সেনারা পুরো জাহাজের কেবিনে তল্লাশি চালান এবং ক্যাপ্টেনকে এক ঘণ্টাব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এছাড়া জাহাজের সকল ক্রুয়ের পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র পরীক্ষা করেন তারা।

জাহাজটি পরিচালনকারী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, রুশ সেনারা যখন দেখতে পান জাহাজের সব ক্রু তার্কিস, তখন তারা একটু নমনীয় হয়ে যান। এছাড়া রাশিয়ার সেনারা কোনো ধরনের হুমকি-ধামকিও দেয়নি অথবা নেতিবাচক কিছুও করেনি।

তবে ক্যাপ্টেনের কাছ থেকে একটি কাগজে সেনারা স্বাক্ষর নিয়ে যান। এ কর্মকর্তার ধারণা, তল্লাশি চালানোর সময় জাহাজে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি—  এই মর্মে একটি লিখিত কাগজে ক্যাপ্টেনের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন>>> ক্রিমিয়া সেতুতে ইউক্রেনের হামলা ঠেকাল রাশিয়া

বর্তমানে জাহাজটি রোমানিয়ার জলসীমায় রয়েছে এবং ইউক্রেনের ইজমাইল বন্দরে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে। এটি নিয়মিত ইউক্রেনের এই বন্দরে আসা-যাওয়া করে।

এদিকে জাহাজটি তুরস্কের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের হলেও এটি রেজিস্ট্রেশন করা আছে পালাও দুর নামে। কিছু নিষেধাজ্ঞার কারণেই তুরস্কের বদলে পালাও দুর নামে এটি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় হামলা চালায় রাশিয়া। এরপর তারা ইউক্রেনের সঙ্গে লাগোয় কৃষ্ণ সাগরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এতে ইউক্রেনের উৎপাদিত শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। তখন গত বছরের জুলাইয়ে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তি হয়। এতে নির্বিঘ্নে ইউক্রেনের পণ্য বিশ্ব বাজারে যাচ্ছিল। কিন্তু এ বছরের জুলাইয়ে চুক্তিটি ভেস্তে যায়। এরপর রাশিয়া হুমকি দেয় কৃষ্ণ সাগর দিয়ে কোনো জাহাজ ইউক্রেনে প্রবেশের চেষ্টা করলে সেটিকে অস্ত্রবাহী হিসেবে গণ্য করা হবে এবং প্রয়োজনে আক্রমণ করা হবে। 

তুরস্কের এ জাহাজটি অবশ্য কৃষ্ণসাগরের ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল না। তা সত্ত্বেও রাশিয়া এটি আটক করেছিল। 

সূত্র: সিএনএন

এমটিআই