লিবিয়ার আল-আসাহের কাছে লিবিয়া-তিউনিসিয়ান সীমান্তে মরুভূমিতে আটকা পড়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসীরা। গত ৫ আগস্টের ছবি

উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়ার সীমান্তের পাশে মরুভূমিতে ২৭ জনের মরদেহ খুঁজে পাওয়া গেছে। নিহত ওই ২৭ জনই অভিবাসী এবং তাদেরকে তিউনিসিয়া থেকে বের দেওয়া হয়েছিল। নিহতরা সবাই সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলোর নাগরিক।

বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট এবং আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিউনিসিয়া থেকে লিবিয়া সীমান্তের দিকে বিতাড়িত এবং মরুভূমিতে পরিত্যক্ত হওয়ার পর সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলোর অন্তত ২৭ জন মারা গেছেন বলে লিবিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

বুধবার লিবিয়ার শহর মিসরাতা থেকে আল জাজিরার মালিক ট্রেইনা বলেছেন, লিবিয়ার সীমান্তরক্ষীরা ‘মরুভূমিতে উত্তর ক্রসিংয়ের দক্ষিণে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এসব মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছে’।

ট্রেইনা বলেন, এখানে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে এবং এর কারণে এখানে অত্যন্ত গরম পড়ছে। উদ্বাস্তু এবং অভিবাসীরা বলেছেন- তারা পানি, খাবার বা আশ্রয় ছাড়াই কয়েকদিন ধরে হাঁটতে বাধ্য হয়েছেন।

লিবিয়ার সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো অত্যন্ত গরমের মধ্যে প্রতিকূল পরিবেশে শরণার্থী এবং অভিবাসীদের ঠেলে দেওয়ার দায়ে তিউনিসিয়াকে অভিযুক্ত করেছে। এছাড়া তিউনিসিয়ার এই পদক্ষেপকে ‘সম্মিলিত বহিষ্কার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

আল জাজিরা বলছে, তিউনিসিয়ার বন্দরনগরী স্ফ্যাক্সে কয়েক দিনের সহিংসতার পর গত জুলাই মাসে কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান অভিবাসী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের বের করে দিতে শুরু করে উত্তর আফ্রিকার এই দেশটি। টানা কয়েক দিনের সেই সহিংসতায় একজন তিউনিসিয়ান নিহত হয়েছিলেন।

মূলত স্থানীয়রা শরণার্থীদের আচরণ সম্পর্কে অভিযোগ তুলেছেন এবং অন্যদিকে উদ্বাস্তুরা বলছেন, তারা বর্ণবাদী হামলার শিকার হয়েছেন। লিবিয়ার সীমান্তরক্ষীরা জানিয়েছে, তিউনিসিয়া থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর প্রতিদিন গড়ে ১৫০ জন মানুষ লিবিয়ায় প্রবেশ করে থাকে।

তাফাউল ওমর নামে সুদানিজ এক শরণার্থী জানান, গর্ভবতী অবস্থায় তাকে তার স্বামীর সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে সামান্য পানি দিয়ে ফেলে রাখা হয়। ২৬ বছর বয়সী ওমর আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘আমার স্বামী একজন শ্রমিক। তাকে (তিউনিসিয়ায়) মারধর এবং অপমান করা হয়েছিল। দুই দিন পর, আমাদের সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা পুরুষদের মারধর করে এবং তারপর আমাদের ফেলে রেখে চলে যায়।’

পরে লিবিয়ান কর্তৃপক্ষের হাতে উদ্ধার হওয়ার আগে তিনি কড়া রোদের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা হেঁটেছিলেন বলে জানান। আল জাজিরা অবশ্য স্বাধীনভাবে তার এই দাবি যাচাই করতে পারেনি।

লিবিয়ার সীমান্তরক্ষী আলি ওয়ালি আল জাজিরাকে বলেছেন, বিস্তীর্ণ মরুভূমিতে লোকদের খুঁজে পাওয়া প্রায়শই কঠিন কাজ। এটি বিস্তৃত একটি মরুভূমি এবং অভিবাসীদের দল সব দিক দিয়েই হেঁটে যাতায়াত করে।

অবশ্য শরণার্থী ও অভিবাসীদের মরুভূমিতে ফেলে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেছে তিউনিসিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া তিউনিসীয় প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ এই ধরনের প্রতিবেদনগুলোকে দেশের বদনাম করার লক্ষ্যে ভুল তথ্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তিউনিসিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ফেকার বুজগায়া এই সপ্তাহে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আফ্রিকান অভিবাসীদের বহিষ্কারের সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছে তিউনিসিয়া।’

মরুভূমিতে আটকে পড়া লোকেরা কীভাবে সেখানে পৌঁছাল জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন: ‘তিউনিসিয়ায় বৈধভাবে প্রবেশের শর্ত পূরণকারী ব্যক্তিদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। দেশের সীমানার বাইরে যা ঘটে তার জন্য তিউনিসিয়া দায়ী নয়।’

গত মাসে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা এবং শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের হাইকমিশনার অফিস বলেছে, তারা তিউনিসিয়ার শত শত অভিবাসী এবং শরণার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, যাদেরকে ‘প্রত্যন্ত ও জনশূন্য’ সীমান্ত এলাকায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বা সীমান্তের অন্য পাশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তিউনিসিয়া ও লিবিয়া থেকে ইতালির দিকে যাওয়ার চেষ্টা অনেক বেড়েছে। মূলত যারা ইউরোপে যেতে ইচ্ছুক তিউনিসিয়া সেসব অভিবাসীদের জন্য একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

এছাড়া চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আফ্রিকান ইউনিয়নকে বর্ণবাদী বলে প্রেসিডেন্ট সাইদ সাব-সাহারান অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউনের ঘোষণা দেওয়ার পর বিপজ্জনকভাবে ভূমধ্যসাগর পারাপার বেড়ে গিয়েছিল।

টিএম