পিয়ংইয়ংয়ে কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদর দপ্তরে সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের বৈঠকে কিম জং উন। বুধবারের ছবি

উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর শীর্ষ জেনারেলকে বরখাস্ত করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। বরখাস্তকৃত ওই সেনা কর্মকর্তা গত প্রায় সাত মাস ধরে ওই পদে ছিলেন। একইসঙ্গে সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর শীর্ষ জেনারেলকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার খবরটি সামনে এনেছে দেশটির সরকারি সংবাদমাধ্যম দ্য কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ)।

রাষ্ট্রীয় এই সংবাদমাধ্যম বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন সেনাবাহিনীর শীর্ষ জেনারেলকে সরিয়ে দিয়েছেন এবং যুদ্ধের সম্ভাবনা, অস্ত্র উৎপাদন বৃদ্ধি ও সামরিক মহড়া সম্প্রসারণের জন্য আরও প্রস্তুতির আহ্বান জানিয়েছেন।

উত্তর কোরিয়ার সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের এক বৈঠকে এই মন্তব্য করেন কিম জং উন। ওই বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার শত্রুদের ঠেকাতে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয় বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। তবে ওই শত্রু ঠিক কে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি।

বিশদ কোনও বিবরণ ছাড়াই কেসিএনএ তার রিপোর্টে বলেছে, উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ জেনারেল ও সামরিক বাহিনীর চিফ অব দ্য জেনারেল স্টাফ পাক সু ইলকে ‘বরখাস্ত করা হয়েছে’। প্রায় সাত মাস তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।

অন্যদিকে পাক সু ইলের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন জেনারেল রি ইয়ং গিল। তিনি এর আগে পূর্ব এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর এই দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং সেইসাথে দেশটির প্রচলিত সৈন্যদের শীর্ষ কমান্ডার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়া রি ইয়ং গিল এর আগে উত্তর কোরিয়ার আর্মি চিফ অব স্টাফ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৬ সালে তাকে সেই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। মূলত তাকে বরখাস্ত করা এবং পরবর্তীতে সরকারি অনুষ্ঠানে দেখা না যাওয়ার কারণে দক্ষিণ কোরিয়ায় ধারণা তৈরি হয়েছিল যে, তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে।

অবশ্য এর ঠিক কয়েক মাস পরে তিনি আবার আবির্ভূত হন এবং সেসময় তাকে অন্য সিনিয়র পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

রয়টার্স বলছে, এদিনের বৈঠকে কিম অস্ত্র উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যও স্থির করে দিয়েছেন বলে বিস্তারিত উল্লেখ না করে কেসিএনএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে তিনি অস্ত্র কারখানা পরিদর্শন করেন যেখানে তিনি আরও ক্ষেপণাস্ত্র ইঞ্জিন, আর্টিলারি এবং অন্যান্য অস্ত্র তৈরির আহ্বান জানিয়েছিলেন।

কেসিএনএ’র প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, কিম একটি মানচিত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল এবং তার আশপাশের এলাকাগুলোর দিকে ইশারা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য উত্তর কোরিয়াকে ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে কামান, রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগ করেছে। তবে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া উভয় দেশই এসব দাবি অস্বীকার করেছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, কিম তার বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখার লক্ষ্যে দেশটির সর্বাধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম দিয়ে মহড়া চালানোর আহ্বানও জানিয়েছেন।

রয়টার্স বলছে, উত্তর কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা দিবসের ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর মিলিশিয়া কুচকাওয়াজ করবে পিয়ংইয়ং। অন্যদিকে আগামী ২১ এবং ২৪ আগস্টের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আর এই ধরনের মহড়াকে উত্তর কোরিয়া তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে থাকে।

টিএম