গত ২৭ জুলাই ইউক্রেনের মাইকোলাইভ অঞ্চলের ওচাকিভ শহরের সামরিক হাসপাতাল পরিদর্শন করেছিলেন ভলোদিমির জেলেনস্কি

ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে ইউক্রেন। সম্প্রতি বন্যাকবলিত মাইকোলাইভ সফরের সময় জেলেনস্কিকে হত্যার ছক কষেছিলেন গ্রেপ্তারকৃত ওই নারী।

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগে এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ইউক্রেনের নিরাপত্তা পরিষেবা জানিয়েছে। তারা বলেছে, গত জুন মাসে বন্যাকবলিত মাইকোলাইভে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের সফরের আগে অভিযুক্ত ওই নারী জেলেনস্কির ভ্রমণসূচী খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিলেন।

এছাড়া জেলেনস্কিকে হত্যার এই পরিকল্পনাকে রুশ ষড়যন্ত্র বলেও অভিহিত করা হয়েছে। ইউক্রেন অবশ্য বেশ নিয়মিতভাবেই স্থানীয় বাসিন্দাদের যারা রাশিয়াকে সমর্থন করে তাদেরকে মস্কোর সামরিক বাহিনীকে তথ্য দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করে থাকে।

বিবিসি বলছে, ওই নারীকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তাকে অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। ইউক্রেনের নিরাপত্তা পরিষেবা এসবিইউ-এর প্রধান তাকে ‘বিশ্বাসঘাতকদের বিরুদ্ধে লড়াই’ সম্পর্কে আপডেট করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তবে ওই নারীকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে রাশিয়া কোনও মন্তব্য করেনি।

ইউক্রেনের নিরাপত্তা পরিষেবা এসবিইউ এক বিবৃতিতে বলেছে, রাশিয়ানদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য দেওয়ার চেষ্টার সময় ওই নারীকে ‘হাতে-নাতে’ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তারা অভিযোগ করেছে, দক্ষিণ মাইকোলাইভ অঞ্চলে সফরের আগে সেখানে জেলেনস্কির পরিকল্পনাগুলো খুঁজে বের করতে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছিলেন অভিযুক্ত ওই নারী।

গ্রেপ্তারের পর এসবিইউ একটি রান্নাঘরে মুখোশধারী এসবিইউ অফিসারদের সাথে সন্দেহভাজন ওই নারীর একটি ছবিও প্রকাশ করেছে। তবে ওই নারী এবং কর্মকর্তাদের মুখ ঝাপসা করে দেওয়া হয়েছে।

বিবিসি বলছে, গত জুন ও জুলাই মাসে দুই দফায় মাইকোলাইভ পরিদর্শন করেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। এর মধ্যে কাখোভকা বাঁধ ভাঙার ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি দেখতে গত জুন মাসে এবং তারপর আবার জুলাই মাসে রাশিয়ার ব্যাপক গোলাবর্ষণের পরে সেখানে সফরে যান ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট।

ইউক্রেনের নিরাপত্তা পরিষেবা বলেছে, জেলেনস্কির সফরের আগে হত্যার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে তাদের সচেতন করা হয়েছিল এবং এই কারণে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিল।

এসবিইউ-এর মতে, সন্দেহভাজন ওই নারী ওচাকিভ নামের একটি ছোট শহরে বাস করতেন এবং প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি গত জুলাই মাসে সেখানে সফর করেছিলেন। এছাড়া ওই একই শহরের একটি সামরিক ঘাঁটিতে দোকানে কাজ করতেন ওই নারী।

অবশ্য জেলেনস্কির সফরের সময় সন্দেহভাজন ওই নারীকে এসবিইউ গ্রেপ্তার করেনি এবং যেকোনো ধরনের হামলা থেকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে রক্ষায় সেসময় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। এছাড়া তার কর্মকাণ্ড এবং রাশিয়ানদের কাছ থেকে ‘প্রাপ্ত অ্যাসাইনমেন্ট’ সম্পর্কে আরও জানতে সফরের পর এজেন্টরা তাকে অনুসরণ করা শুরু করে বলে এসবিইউ উল্লেখ করেছে।

এছাড়া সন্দেহভাজন ওই নারী বিভিন্ন স্থানে গাড়ি চালিয়ে ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনার ছবি ও ভিডিওধারণ করেছিলেন বলেও বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে।

বিবিসি বলছে, গ্রেপ্তারের পর এখন ওই নারীকে অস্ত্র ও সৈন্যদের গতিবিধি সম্পর্কিত তথ্যের অননুমোদিত প্রচারের অভিযোগের মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। দোষী সাব্যস্ত হলে ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে তার।

রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনী অবশ্য কথিত ‘রাশিয়ান এজেন্টদের’ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর বিশ্বাস, রাশিয়ান বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে এসব এজেন্ট সহায়তা করেছিল।

টিএম