ইসলামাবাদের একটি আদালত তোশাখানা মামলায় দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করার পরপরই পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানকে শনিবার গ্রেফতার করা হয়। এরপর ইসলামাবাদের একটি কারাগারে রাত কাটিয়েছেন তিনি। পরে সেখান থেকে ইসলামাবাদের বাইরের একটি কারাগারে নেওয়া হয়েছে তাকে। কিন্তু দেশটির সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাৎ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন তার আইনজীবীরা।

রোববার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইমরান খানকে শনিবার লাহোরের পূর্বাঞ্চলের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ইসলামাবাদের আদালত তাকে রাষ্ট্রীয় উপহারসামগ্রী বিক্রির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে। দোষী সাব্যস্ত করায় ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অযোগ্য ঘোষণা করা হবে।

ইমরান খানের আইনবিষয়ক মুখপাত্র নাঈম হায়দার পাঞ্জোথা বলেছেন, ‘আত্তোক কারাগারটিতে (ইমরান) আইনি দলের পাশাপাশি আশপাশের স্থানীয়দেরও যাওয়ার অনুমতি নেই। তারা ইমরান খানকে খাবার দিতে বা আইনি নথিতে স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করতে পারেননি।’

ইমরানের আইনজীবীদের কারাগারে প্রবেশাধিকার সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাইলে দেশটির তথ্যমন্ত্রী পাঞ্জাবের প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। পিটিআইয়ের চেয়ারম্যানকে বর্তমানে যে কারাগারে রাখা হয়েছে, সেটি পাঞ্জাবে অবস্থিত। তবে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের জন্য পাঞ্জাবের শীর্ষ তথ্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

ইসলামাবাদের ট্রায়াল কোর্ট তিন বছরের কারাদণ্ডের রায় দেওয়ার পর ইমরান খানকে সোমবার আদালতে হাজির হবেন কি না তা স্পষ্ট নয়।

পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সাথে প্রকাশ্য বিরোধ ও ইমরান খানের দল ভেঙে যাওয়ার পর দেশটিতে তার রাজনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করে দেওয়ার ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মাঝে সর্বশেষ গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে।

ইমরানের দল পিটিআই বলছে, তারা ইসলামাবাদের জেলা ও দায়রা আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেছে।

গত মে মাসে আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করেছিল দেশটির আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। ওই সময় দেশজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ করেন পিটিআইয়ের কর্মী-সমর্থকরা। এর বিপরীতে শনিবার ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করার পর পিটিআইয়ের নেতারা দেশজুড়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের ডাক দিলেও তেমন কোনও সহিংসতার ঘটনা দেখা যায়নি।

দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, গত মে মাস থেকে দেশটিতে ইমরান খানের হাজার হাজার সহযোগী ও সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া ইমরান-পন্থী অনেক সংসদ সদস্যকেও গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। অনেকেই ইমরান খানের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন। পিটিআইয়ের কিছু নেতা দলটি থেকে পদত্যাগও করেছেন।

পাকিস্তানে আগামী নভেম্বরের মাঝে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে চলতি মাসে দেশটির সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের চিন্তা-ভাবনা চলছে। কিন্তু শনিবার দেশটির সরকার বলেছে, দেশটিতে চালানো সাম্প্রতিক জনশুমারির কারণে নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে।

শনিবার ইমরান খানকে পাকিস্তানের আইন শৃঙ্খলাবাহিনী গ্রেপ্তার করার পর ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, তারা পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং দেশটির গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি সমর্থন জানায়।

ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের সাথে নির্বাচনের সম্পর্ক থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন সরকার। দেশটির আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার অর্থ সম্ভবত ইমরান খান পাঁচ বছরের জন্য রাজনীতিতে অযোগ্য হবেন।

পিটিআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি ইমরানের অনুপস্থিতিতে দলটির হাল ধরেছেন।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস