মিয়ানমারে এক কবির বিদ্রোহে জান্তার কপালে চিন্তার ভাঁজ
২০২১ সালে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই বিদ্রোহীদের প্রতিরোধ মোকাবিলা করে যেতে হচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনীকে।
সম্প্রতি জান্তা সরকারের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে মিলিশিয়া বাহিনী বিপিএলএ। সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের দুমাস পর মাত্র ১৭ জন আর্মি নিয়ে গড়ে ওঠে এই বাহিনী- বামার পিপলস লিবারেশন আর্মি (বিপিএলএ)। তবে শিবিরে এখন এক হাজার যোদ্ধা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
দেশটির ভেতরে প্রতিরোধ যোদ্ধা গ্রুপগুলোর মধ্যে বিপিএলএ এর সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও, বাহিনীটি উদ্বিগ্ন করে তুলছে জান্তা সরকারকে।
কবি থেকে মিলিশিয়া নেতা হওয়া বিপিএলএ প্রধান মং সাউংখা এক বার্তায় জানিয়েছেন, তার সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তাকে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জে ফেলবে। তারা কিছু নতুন এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
এ ছাড়া বিপিএলএ দেশটির কেন্দ্রস্থলের দিকে অভিযানের পরিকল্পনা করছে। খবর- রয়টার্সের।
গণতন্ত্রের জন্য প্রতিরোধ যোদ্ধা বিপিএলএ নেতার এমন ঘোষণা জান্তা বাহিনীকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মিয়ানমার রিসার্চ সেন্টারের বিশ্লেষক নিকোলা উইলিয়ামস রয়টার্সকে বলেন, প্রতিরোধ বাহিনী জান্তার উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করেছে। অনেক এলাকা দখলে নিয়েছে। তবে বড় কিছুর জন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো একসঙ্গে কাজ চাইছে।
তিনি বলেন, আগে অস্ত্র ও সম্পদের জন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার ফলে একসঙ্গে কাজ করার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল।
বিপিএলএ যোদ্ধা কারা?
বিপিএলএ প্রধান মং সাউংখা, যিনি একজন কবি ছিলেন। জান্তার বিরুদ্ধে লেখার কারণে কারাবন্দী হন। সংখ্যালঘুদের জন্য সমতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন তিনি। সশস্ত্র এ গোষ্ঠীর অধিকাংশই বৌদ্ধ বামার। বর্তমানে তারা মিত্রদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পেয়ে দেশের সীমান্তে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অথচ শুরুতে বিপিএলএ-এর কাছে প্রশিক্ষণের জন্য শুধুমাত্র কাঠের বন্দুক ও বিবি বন্দুক ছিল। কিন্তু বর্তমানে তারা এম সিক্সটিন রাইফেল ও এক-৮১ বহন করছে। মূলত তারা মিত্রদের কাছ থেকে এ ধরনের অস্ত্র ধার করেছে। এর মধ্যে রয়েছে কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ) ও আরাকান আর্মি (এএ)। তারা এক সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
তহবিল ও খাদ্য সহায়তা
বিপিএলএ খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তায় মিত্রদের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছে। কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে তহবিল সংগ্রহে মাদক পাচারের ওপর নির্ভর করলেও বিপিএলএ-এর অর্থায়ন আসে অনুদান থেকে। এ ছাড়াও অং সান সু চির প্রশাসনের জাতীয় ঐক্য সরকারের সশস্ত্র শাখা পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) বিপিএলএকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করছে। এর পেছনে আরও বড় কারণ পিডিএফ শত শত মিলিশিয়ার সমন্বয়ে গঠিত, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই বামার জাতিগোষ্ঠী।
বিপিএলএর রাজনৈতিক কর্মকর্তা ইয়ো আন্ট মিন বলেছেন, বামারের আধিপত্য নিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ ছিল, কিন্তু মং সাউংখার নেতৃত্ব বিপিএলএকে অন্যান্য সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।
এনএফ