আগামী ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করা এবং দ্বিতীবারের মতো ডেমেক্রেটিক পার্টির প্রার্থিতা অর্জনের জন্য নিজের উত্তরসূরী বারাক ওবামার সহযোগিতা চেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

সূত্রের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, গত জুন মাসের কোনো এক দিন বারাক ওবামাকে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বাইডেন এবং ওবমা সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করে সেখানে উপস্থিতও হয়েছিলেন।

সে সময়েই আগামী নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থিতা এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করার ব্যাপারে ওবামার সহযোগিতা প্রার্থনা করেন বাইডেন। জবাবে ওবামা বলেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন নেতা ও যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে বর্তমানে তার যে সামর্থ্য/প্রভাব রয়েছে, তা দিয়ে যতখানি সম্ভব— বাইডেনকে সহযোগিতা করবেন তিনি।

ডেমোক্রেটিক পার্টির দুই শীর্ষ নেতার এই একান্ত ব্যক্তিগত মধ্যাহ্নভোজ এবং বৈঠক সম্পর্কে অবগত হোয়াইট হাউসের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

প্রসঙ্গত, বারাক ওবামা এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় ডেমেক্র্যাট নেতা। ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট হন, পরে ২০১৩ সালের নির্বাচনেও জয়ী হয়ে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুসারে কোনো প্রেসিডেন্টেরই দুই মেয়াদের বেশি সময় এই পদে থাকতে পারেন না। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের বিশ্বাস, যদি এই বাধ্যবাধকতা না থাকতো— তাহলে ২০২০ সালের নির্বাচনেও জয়ী হতেন বারাক ওবামা।

জো বাইডেন বয়সে বারাক ওবামা থেকে ১৯ বছরের বড়। ১৯৮৮ সালে নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ডেমোক্রেটিক পার্টির কাছে প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা চাইলেও তা পাননি তিনি। তারপর ২০০৮ সালের নির্বাচনেও প্রার্থিতা চেয়ে ব্যর্থ হন বাইডেন। সেবার বারাক ওবামাকে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে ডেমোক্রেটিক পার্টি।

বারাক ওবামা অবশ্য সেই নির্বাচনে জিতে জো বাইডেনকে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট করেছিলেন। তার পরের মেয়াদেও সেই পদে ছিলেন বাইডেন।

২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনকে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে ডেমোক্রেটিক পার্টি। সেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ও তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ৭০ লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য প্রেসিডেন্টের তুলনায় জো বাইডেনকে অবশ্য অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। যেমন করোনা মহামারি, অর্থনৈতিক সংকট, মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক মেরুকরন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।

অধিকাংশ চ্যালেঞ্জে সফল হয়েছেন বাইডেন। তবে সাম্প্রতিক সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু জরিপে দেখা গেছে, সাধারণ ভোটারদের কাছে ৮০ বছর বয়স্ক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা কমছে; বাড়ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের গ্রহণযোগ্যতা।

কয়েকটি ফৌজদারি মামলার আসামি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বর্তমানে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে; কিন্তু মার্কিন সংবাদমাধ্যম ও সরকারি-বেসরকারি জরিপের তথ্য বলছে, জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার নিরিখে দিন দিন কোনঠাসা হয়ে পড়ছেন বাইডেন।

ওবামা-বাইডেনের এই ব্যক্তিগত সাক্ষাতের ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে ওবামার উপদেষ্টা এরিক স্কুল্টজের যোগাযোগ করেছিল ওয়াশিংটন পোস্ট।

তবে স্কুল্টজ সরাসরি উত্তর এড়িয়ে ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘আসলে আমরা এখন তরুণ ভোটারদের আকর্ষণ করতে বিভিন্ন সৃষ্টিশীল পন্থার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। সেসব পন্থার একটি হলো সেচ্ছাসেবী কার্যক্রম। সর্বোপরি আমরা চাই, যুক্তরাষ্ট্রের সামনে এগিয়ে চলার পথ আরো মসৃন হোক এবং সকল কাঁটা দূর হোক।’

সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট

এসএমডব্লিউ