পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার ফুরফুরা শরিফের উন্নয়নে ৭৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা (৫৮ কোটি ৬২ লাখ রুপি) বরাদ্দ দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় এ তথ্য জানিয়েছেন রাজ্য সরকারের পৌর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

মন্ত্রি আরও জানান, ফুরফুরা উন্নয়ন পর্ষদ নামের একটি সরকারি সংস্থা উন্নয়ন কার্যক্রম এবং এই অর্থের দেখভালের দায়িত্বে থাকবে।

ফিরহাদ তার বক্তব্য শেষ করার পর ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ও ভাঙড়ের বিধায়ক পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকি প্রশ্ন তোলেন, ফুরফুরা উন্নয়ন পর্ষদের অফিস কোথায়? জবাবে ফিরহাদ বলেন, ‘এখনও কোনও অফিস আমরা পাইনি। ওখানে একটা পরিত্যক্ত জায়গা পাওয়া গিয়েছে, সেখানেই অফিস হবে। ফুরফুরা শরিফের গেটের পাশে যে জমি রয়েছে সেখানেই অফিস, মুসাফিরখানা হবে। আপাতত শ্রীরামপুরে মহকুমা শাসকের অফিস থেকে কাজ চলবে পর্ষদের।’

পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ইসলাম ধর্মালম্বীদের কাছে ফুরফুরা পবিত্র তীর্থস্থান। সেখানকার পীরজাদা তথা হুজুরদের ঘিরে আবেগও তেমনই। সারা বছর রাজনীতিকদেরও যাতায়াত লেগে থাকে হুগলির জাঙ্গিপাড়া ব্লকের এই জনপদে। অনেকেই মনে করেন, বিভিন্ন দলের রাজনীতিকদের ফুরফুরায় যাওয়ার পিছনে সংখ্যালঘু ভোটের অঙ্ক থাকে। সিপিএম আমল থেকেই এটি চলে আসছে। একটা সময়ে হুগলির প্রয়াত সিপিএম নেতা সুনীল সরকার দলের পক্ষ থেকে ফুরফুরার সঙ্গে ‘সমন্বয়’রাখতেন।

২০০৮ সাল থেকে বদলাতে শুরু করে এই চিত্র। ফুরফুরার পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকির সঙ্গে তৃণমূলের তৎকালীন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সম্পর্ক এবং ঘনিষ্ঠতা রাজ্য রাজনীতিতে সুবিদিত ছিল। সে সময় আনুষ্ঠানিকতা সারতে অন্য দলের নেতারা গেলেও ফুরফুরা কার্যত তৃণমূলের হয়ে গিয়েছিল বলেই প্রচার হয়ে গিয়েছিল। ওই বছরই গঠন করা হয় ফুরফুরা শরিফ উন্নয়ন পর্ষদ, আর তার চেয়ারম্যান হন ফিরহাদ।

এতদিন এভাবেই চলছিল। ত্বহা অবশ্য মাঝেমাঝে ‘বিদ্রোহী’ হতেন, আবার চুপও করে যেতেন।

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে থেকে এ সমীকরণে কিছুটা বদল আসে। অনেকের মতে, তৃণমূল খানিকটা বিপাকে পড়েছিল আব্বাস সিদ্দিকি এবং নওশাদের আগমনে। ভাঙড়ে নওশাদের জয় পরিস্থিতি আরও খানিকটা ঘোরালো করেছিল। অনেকের অভিমত, সেই কারণেই একদা নওশাদদের কথা বলতে গিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের নেতা তথা সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসির উদাহরণ টেনেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সাগরদিঘি উপনির্বাচনের পরে ফুরফুরা শরিফের উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান বদল করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। ফিরহাদকে সরিয়ে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয় সপ্তগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্তকে। মমতাই সরকারে এসে ফুরফুরা উন্নয়ন পর্ষদ তৈরি করেছিলেন। যেমন করেছেন তারকেশ্বরের ক্ষেত্রেও। অনেকের মতে, অতীতেও ফুরফুরা শরিফে হুজুরদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন ছিল। ত্বহার উল্টো সুরে চিরকাল কথা বলে এসেছেন ইব্রাহিম সিদ্দিকি। কিন্তু সেই বিভাজন শাসকদলকে কখনও ‘বিড়ম্বিত’ করেনি। নওশাদদের ‘উত্থানে’ সেই বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছে।

হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর এবং মালদহ, মুর্শিদাবাদের বাঙালি মুসলিমদের মধ্যে ফুরফুরার প্রভাব রয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন। লোকসভা ভোটের আগে ফুরফুরা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হয়ে উঠবে নানা অঙ্কে। সে দিক থেকে ফুরফুরার উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দের কথা বিধানসভায় মন্ত্রীর জানানোও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।

সূত্র : আনন্দবাজার

এসএমডব্লিউ