সবার প্রাণরক্ষা করা সম্ভব নয়, দাবি হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর
ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হরিয়ানা সম্প্রতি হিন্দু ও মুসলিমদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সাক্ষী হয়েছে। এমনকি বিজেপিশাসিত এই রাজ্যটির অনেক জায়গায় এখনও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দাঙ্গায় বেশ কয়েকজন নিহত এবং আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
এতে করে সমালোচনার মুখে পড়েছে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। তবে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পুলিশ দিয়ে রাজ্যের সবার প্রাণরক্ষা করা সম্ভব নয়। বুধবার (২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্যের প্রতিটি ব্যক্তিকে রক্ষা করা পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয় বলে বুধবার মন্তব্য করেছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার। এই পরিস্থিতিতে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য রাজ্যের জনসাধারণের প্রতি আবেদন করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ভারতের হরিয়ানায় মুসলিমদের উচ্ছেদের হুমকি
এনডিটিভি বলছে, গত সোমবার ভারতের হরিয়ানার গুরুগ্রামে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয় এবং পরে তা বেশ দ্রুতই রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে। সাম্প্রদায়িক এই দাঙ্গায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া গুরগাঁওতে একটি মসজিদ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং হামলায় ওই মসজিদের ইমামও নিহত হয়েছেন। এমনকি এই সহিংসতা এখন ভারতের জাতীয় রাজধানী দিল্লির দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। হরিয়ানা সরকার অবশ্য দাবি করছে, অবস্থা এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং রাজ্যে বিপুল সংখ্যক পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বুধবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার। তিনি বলেন, ‘সৌহার্দ্য না থাকলে নিরাপত্তাও থাকে না। সবাই যদি একে অপরের বিরোধিতা করার দিকে মনোযোগ দেয়, তাহলে কোনও নিরাপত্তাই থাকবে না। পুলিশ, সেনাবাহিনী বা আপনি এবং আমার পক্ষে প্রতিটি মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।’
আরও পড়ুন: ভারতে বন্ধ করে দেওয়া হলো ৮০০ বছরের পুরোনো মসজিদ
তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নির্দিষ্ট পরিবেশ প্রয়োজন। (মানুষের মধ্যে) বন্ধুত্ব, সুসম্পর্ক থাকতে হবে... এর জন্য আমাদের শান্তি কমিটি আছে... সমস্যা হলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। তারা শান্তি মিছিল করেছে... বিশ্বের যেখানেই যান, পুলিশ সবাইকে রক্ষা করতে পারে না। আমাদের রাজ্যে দুই লাখ মানুষ রয়েছে, আর পুলিশ সদস্য মাত্র ৫০ হাজার।’
গুরগাঁও আর নুহের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মনু মানেসর নামে এক হিন্দুত্ববাদী নেতার নাম উঠে আসছে। অভিযুক্ত এই মানেসরের আসল নাম মোহিত যাদব। তিনি নিজেকে বজরং দলের গোরক্ষক বাহিনীর নেতা বলে দাবি করেন।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে, গরু পাচার করার সন্দেহে জুনেইদ এবং নাসির নামে রাজস্থানের দুই মুসলিম বাসিন্দাকে পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন মনু মানেসর আর তার সঙ্গীরা। চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি জুনেইদ এবং নাসিরের দগ্ধ মৃতদেহ পাওয়া যায় হরিয়ানার ভিওয়ানিতে।
আরও পড়ুন: ভারতে ৫৫০ বছরের পুরোনো মাদ্রাসায় পূজা করল উচ্ছৃঙ্খল জনতা
তবে কট্টরপন্থি এই হিন্দুত্ববাদী নেতা মনু মানেসরকে কখনোই গ্রেপ্তার করা যায়নি।
খাট্টার বলেন, সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটানো সোমবারের সহিংসতার সঙ্গে মনু মানেসার জড়িত ছিলেন কিনা সে সম্পর্কে রাজ্যের কাছে কোনও তথ্য নেই। তিনি বলেন, তার (মনু মানেসার) বিরুদ্ধে মামলাটি রাজস্থান সরকার দায়ের করেছে।’
হরিয়ানার এই মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘আমি রাজস্থান সরকারকে বলেছি, তাকে খুঁজে বের করার জন্য। যদি তাদের সাহায্যের প্রয়োজন হয়, আমরা সাহায্য করতে প্রস্তুত। এখন রাজস্থান পুলিশ তাকে খুঁজছে। তার অবস্থান সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনও তথ্য নেই। তাদের (রাজস্থানের) কাছে আছে কি না, আমরা কিভাবে বলব?’
এদিকে হরিয়ানার মুসলিমদের তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গুরুগ্রামের কয়েকটি মুসলিম পরিবার জানিয়েছে, উগ্রবাদী হিন্দুরা তাদের বাড়ি ছাড়া করার হুমকি দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ভিডিও: গুজরাটে মুসলিমদের খুঁটিতে চেপে ধরে পুলিশের মারপিট
বুধবার এনডিটিভির পৃথক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুরুগ্রামে পশ্চিমবঙ্গের ১০০টিরও বেশি অভিবাসী পরিবার বসবাস করত। তাদের মধ্যে ৮৫টি পরিবার ইতোমধ্যে ভয়ে তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। বাকি যারা রয়ে গেছেন তাদের এখন চলে যেতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
তবে এখনও যারা আছেন তারা জানিয়েছেন, অন্য জায়গায় বা নিজ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে যে চলে যাবেন, সে আর্থিক সক্ষমতাও এখন তাদের নেই। আর এ কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও গুরুগ্রামে থেকে গেছেন তারা।
অবশ্য গুরুগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার দাবি করেছেন, অভিবাসী মুসলিম পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। তিনি জানিয়েছেন, স্পর্শকাতর অঞ্চলগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হবে।
টিএম